ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ময়মনসিংহে ‘অচেনা’ তৃণমূল বিএনপির প্রার্থীরা

ময়মনসিংহে ‘অচেনা’ তৃণমূল বিএনপির প্রার্থীরা

.

মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০০:৪৫

ময়মনসিংহের ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৮টিতে প্রার্থিতার কথা ঘোষণা করেছিল তৃণমূল বিএনপি। কিন্তু ৬টি আসনে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। স্থানীয় রাজনীতিতে তারা খুব একটা পরিচিত মুখ নন। তাদের নিয়ে রয়েছে অনেকের কৌতূহল।
তৃণমূল বিএনপি থেকে ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে মার্শেল মালেশ চিরান, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে মো. জামাল উদ্দিন, ময়মনসিংহ-৪ (সদর) দীপক চন্দ্র গুপ্ত, ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক ফরাজী, ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আবু জুনাইদ বিল্লাল, ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে মো. নাসির উদ্দিন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কাগজপত্র প্রস্তুত করতে সময় চলে যাওয়ায় ময়মনসিংহ-১১ (গফরগাঁও) আসনে মাহফুজা বেগম মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে আবদুস সবুরকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তিনি জানান, বয়স হওয়ার কারণে আর ঝামেলায় জড়াতে চান না। তাই প্রার্থী হননি।
মার্শাল মালেশ চিরান যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ ধর্মবিষয়ক সম্পাদক, হালুয়াঘাট বিএনপির সদস্য এবং তৃণমূল বিএনপির বিভাগীয় সহসভাপতি। এলাকায় তেমন পরিচিতি নেই  মার্শালের। ধারা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মার্শাল সমকালকে বলেন, আওয়ামী লীগের তিন নেতা ভোটে দাঁড়ানোয় তুলনতামূলকভাবে ভালো অবস্থানে আছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপির ও ভাসমান ভোট পাবেন বলে আশা করেন। প্রত্যেকটি জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে মাঠে কাজ করায় এবং শিক্ষকতা করায় তিনি জনপ্রিয়। শিক্ষার্থী ছাড়াও বিএনপির যারা দলে মূল্যায়ন পায়নি তারা যোগাযোগ করছে। আদিবাসীরাও ভোট দিবে। তাই জয়ের ব্যপারে তিনি আশাবাদী।

নান্দাইলে প্রার্থী হওয়া আবু জুনাইদ বিল্লাল একসময় থানা ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। ‘অচেনা’ বিল্লাল নির্বাচনের মাঠে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবেন না বলে দাবি স্থানীয় অনেকের। তবে বিল্লাল সমকালকে বলেন, ‘নতুন দল ও নতুন প্রার্থী হিসেবে সাড়া পাচ্ছিলাম। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। অনেকে যোগাযোগ করছে। এলাকার লোকজন চেনে না এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমার পরিবার ও আমাকে চেনে না এমন লোক নেই। তবে যারা শুধু ঘর থেকে বের হয় চায়ের দোকানে যায় আর আসে তারা হয়তো অনেকে মুখ চিনে না। কারণ আমি ঢাকাতে একটু বেশি থাকি।’

বিএনপির রাজনীতিতে এক সময় সক্রিয় ছিলেন ত্রিশাল থেকে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ডক্টর আব্দুল মালেক ফরাজী। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ইউরোপ বিএনপির সমন্বয়ক ছিলেন দীর্ঘদিন। হাই কমান্ডের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয়। কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। রাজনীতিতে দীর্ঘদিন বিরতির পর এবার তৃণমূল বিএনপি থেকে প্রার্থী হলেন। আব্দুল মালেক বলেন, ‘প্রার্থী হতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন মনে করায় তৃণমূল বিএনপির প্রতীক নিয়েছি। দলটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মানুষের সমর্থন থাকায় প্রার্থী হয়েছি।’    
ভালুকা থেকে তৃণমূল বিএনপির মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নিয়েছি। কাগজপত্র সম্পর্কে ধারণা কম থাকায় দৌড়াদৌড়ি করে মনেনয়নপত্র জমা দিয়েছি। নিজের বাড়ি গফরগাঁও ও শ্বশুরবাড়ির এলাকা ভালুকা থেকে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। ভালুকা থেকে পেলাম। ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না যেতে পারলেও ভালো একটি অবস্থানে থাকব।’


ভোটের মাঠে বাবা-মেয়ে              
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে বর্তমান এমপি মোসলেম উদ্দিন পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। প্রবীণ এই নেতার পরিবারের চলছে তীব্র বিরোধ। বাবার বিরুদ্ধে ছেলেমেয়ের অবস্থান এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ভোটের মাঠে মোসলেম উদ্দিনকে ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মেয়ে সেলিমা বেগম। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। বাবা-মেয়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলে নৌকার বিজয় হাতছাড়া হতে পারে এমন ধারণা অনেকের।


স্বামী-স্ত্রী ও চাচা একই আসনে প্রার্থী
ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান সুমন। তাঁর স্ত্রী কানিজ ফাতেমা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মাহমুদ হাসান টানা দুই বার দলের সমর্থনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দলীয় এমপি এ আসনে না থাকায় তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তরুণ এই নেতা। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সুমনের চাচা সাবেক এমপি মো. আবদুছ ছাত্তার। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির কারণে ২০১৪ সালে আবদুছ ছাত্তারকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। সে সময় এমপি হন জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম। ২০১৮ সালেও ফখরুল ইমাম এমপি হন আওয়ামী লীগের সমর্থনে। এবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী তিনি। দুই দলের মধ্যে আসন ভাগাভাগি হলে এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা প্রত্যাহার হতে পারে এমন গুঞ্জন আছে।
২০১৮ সালে নির্বাচনে মাহমুদ হাসান স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনের বিষয়ে ত্রুটি ধরা পড়ায় তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এবার যেন মাঠ থেকে
ছিটকে পড়তে না হয় সে কারণে স্ত্রীকে ‘ডামি’ হিসেবে রেখেছেন। মাহমুদ হাসান বলেন, যাচাইবাছাইয়ের পর স্ত্রীর মনোনয়নপত্র প্রয়োজনে প্রত্যাহার করা হবে।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×