স্বতন্ত্র প্রার্থী আ’লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী নাকি কৌশল
লিয়াকত হোসেন খোকা, আব্দুল্লাহ আল কায়সার
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০১:০২
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুল্লাহ আল কায়সার, বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকাসহ ১৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার এসব মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত আব্দুল্লাহ আল কায়সার ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী রুবিয়া সুলতানা, চাচাতো ভাই এরফান হোসেন দীপ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাসমুল ইসলাম ভূঁইয়ার ছেলে নগদের নির্বাহী পরিচালক মারুফুল ইসলাম ঝলক, কেন্দ্রীয় নেতা এএচএম মাসুদ দুলাল। এর মধ্যে কায়সারের স্ত্রী ছাড়া বাকি তিনজন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর দাবি, চারজনকে নির্বাচনী কৌশল হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখা হয়েছে। ১০ বছর ধরে আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে আছে। এ বছর আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে, জাপাকে কোনোভাবেই এ আসনে ছাড় দেওয়া হবে না। এ জন্য একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তে দলীয় প্রার্থী আবদুল্লাহ আল কায়সারকে বসিয়ে দিলেও যেন কায়সারের স্ত্রী বা অন্য কেউ এ আসনে নির্বাচন করতে পারেন। তবে শুধু জাপা প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যই এ কৌশল নেওয়া হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তারা প্রার্থী হয়েছেন। কোনো কৌশল নয়। দু’জন হেভিওয়েট প্রার্থীকে পরাজিত করে জয় ছিনিয়ে নিয়ে সংসদে যাবেন।
এ আসনে নৌকা ও জাপার মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের (বিটিএফ) প্রার্থী মো. মুজিবুর রহমান মানিক, জাকের পার্টির মো. জামিল মিজি, বিএনএম দলের এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের নারায়ণ দাস, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. সিরাজুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসএম) মো. আসলাম হোসাইন ও মুক্তি জোটের মো. আরিফ।
এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন ১৬ জন। দলীয় প্রার্থী হিসেবে আবদুল্লাহ আল কায়সারের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলীয় প্রার্থী হিসেবে কায়সারের নাম ঘোষণার পর উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন সভায় তারা একাট্টা হয়ে নৌকাকে বিজয়ী করতে অঙ্গীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের প্রথম সারির এক নেতা বলেন, নির্বাচনী কৌশল হিসেবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখা হয়েছে। আবারও এ আসন হাতছাড়া হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে যে কোনো একজন জোটের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ছাড়া শেষ দিন পর্যন্ত কায়সার নৌকা মনোনীত প্রার্থী থাকলে স্বতন্ত্র সবাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন।
উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার বলেন, ‘আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জোটের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আশা করি, এ আসনে নৌকা প্রতীক থাকবে। ১০ বছর নৌকার কোনো প্রার্থী ছিলেন না। এ বছর নেতাকর্মী নৌকা প্রতীক পেয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন। ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করব।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন এরফান হোসেন দীপ। তিনি বলেন, তাঁর বাবা সংসদ সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন। আবদুল্লাহ আল কায়সারকে দল বেছে নিয়েছে। দল থেকে এ বছর প্রার্থী না হওয়ার জন্য কোনো প্রকার চাপ বা বাধা নেই। স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী হয়ে সংসদে যাওয়ার আশা করছেন তিনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নগদের নির্বাহী পরিচালক মারুফুল ইসলাম ঝলক বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলেই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর বাবা বর্তমানের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। দলীয় বাধা না থাকায় প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত এলে তিনি মাথা পেতে নেবেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুল্লাহ আল কায়সার বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার জন্য কাউকে বাধা দিতে পারি না। যার যার অবস্থান থেকে বিজয়ী হতে চেষ্টা করবেন। আমিও নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কবর। কোনো প্রার্থীকেই ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। আমি আশাবাদী আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জয় হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীককে জয়ী করে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া হবে।’