এমপি লতিফের চেয়ে আয়-সম্পদ দ্বিগুণের বেশি কাউন্সিলর সুমনের
লোগো
শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০১:২৯ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০৭:৫৩
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে মোট ৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের অন্যতম দু’জন হলেন আওয়ামী লীগের হয়ে চতুর্থবারের মতো মনোনয়ন পাওয়া বর্তমান এমপি এম এ লতিফ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন। এর মধ্যে সুমন দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। ফলে তাদের সম্পদ ও দায়-দেনার তথ্য নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ইসিতে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, এমপি লতিফের বার্ষিক আয় দেখানো হয় ৭৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সুমন তাঁর বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন দুই কোটি টাকার বেশি। বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এমপি লতিফের জমা অর্থের পরিমাণ দেখানো হয় ৪২ লাখ ৪২ হাজার ৬২৩ টাকা। এখানেও এমপিকে টেক্কা দেন সুমন। তাঁর জমা রয়েছে ১৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
হলফনামায় নিজের পেশা ‘ব্যবসা’ উল্লেখ করেছেন এমপি লতিফ। শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেন ডিপ্লোমা ইন লেদার টেকনোলজি (জার্মানি)। এম এ লতিফ চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতিও ছিলেন। পড়ালেখায় এইচএসসি পাস কাউন্সিলর সুমনও নিজের পেশা ‘ব্যবসা’ উল্লেখ করেছেন। নিজ নামে তিনি নগদ অর্থের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৩ টাকা। এছাড়া নির্ভরশীলদের মধ্যে স্ত্রীর বার্ষিক আয় কৃষি খাতে ৩৫ লাখ টাকা, ব্যবসা থেকে ৩০ লাখ টাকা, ডিপিএস থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, অন্যান্য খাতে ৯ লাখ টাকা দেখান।
এমপি লতিফ হলফনামায় উল্লেখ করেন, তাঁর গাড়ি রয়েছে ৭ লাখ ৫ হাজার ২৫০ টাকার। বার্ষিক তিনি কৃষি থেকে আয় করেন ১৯ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৭ টাকা। ব্যবসা থেকে বছরে আয় ২০ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৪ টাকা, শেয়ার থেকে ২ হাজার ৩৬৫ টাকা, চাকরি এবং সম্মানী বাবদ ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৫ টাকা আয় করেছেন। এছাড়া অন্যান্য খাত থেকে আয় করেছেন ৯ লাখ ৫৬ হাজার ৪১১ টাকা। লতিফের কাছে নগদ রয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৯০ হাজার ৮৬১ টাকা এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৫২ লাখ ১৯ হাজার ২৩০ টাকা। এছাড়া স্ত্রীর নামে জমা রয়েছে আরও ৭৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪৫৭ টাকা। নিজের নামে বন্ড ঋণপত্র এবং শেয়ার রয়েছে ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৬৫০ টাকা এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩২৫ টাকা। নিজের নামে স্বর্ণ রয়েছে ৪৫ হাজার টাকার। স্ত্রীর নামে স্বর্ণ ও মূল্যবান অলংকার রয়েছে ৫ হাজার টাকার।
কাউন্সিলর সুমনের পেশা ‘ব্যবসা’ হলেও কৃষিতেই আয় করেন বেশি। ব্যবসায় থেকে তাঁর বার্ষিক আয় মাত্র ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ১৫৫ টাকা। এছাড়া বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্টের দাম ৬৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। রয়েছে শেয়ার বাবদ ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৩১০ টাকা, সম্মানী দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে নগদ টাকা আছে ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৩ টাকা। এছাড়াও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ১৫ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৯ টাকা। স্ত্রীর বার্ষিক আয় কৃষি খাতে ৩৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে নগদ আছে এক লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৯৮ লাখ ৪১ হাজার ১০০ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। স্ত্রী ও নিজের নামে গাড়ি আছে ৪টি। স্ত্রীর কাছে স্বর্ণ আছে ৪০ হাজার টাকার। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি খাতে সুমনের আয় এবং সম্পদ দেখানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে এমপি লতিফের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে কাউন্সিলর সুমন সমকালকে বলেন, ‘নিজের ও স্ত্রীর নামে থাকা সবকিছুই আমি হলফনামায় তুলে ধরেছি। কোনো তথ্য লুকাইনি।’ তবে হলফনামায় উল্লেখের বাইরেও এমপি লতিফের নামে দেশ-বিদেশে অনেক সম্পদ আছে বলে দাবি করেন তিনি।