- সারাদেশ
- মাঠের ঘাসে বিষ, খেয়ে মরছে গরু
মাঠের ঘাসে বিষ, খেয়ে মরছে গরু

ফাইল ছবি
ঝিনাইদহের শৈলকূপার ভুলুন্দিয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক নমছের আলী। গত মঙ্গলবারও তার গোয়ালভরা সুস্থ সবল তিনটি গাভি ও একটা বাছুর ছিল। মাঠ থেকে তরতাজা হেলঞ্চা জাতীয় ঘাস এনে দুপুরে খাওয়ালে সন্ধ্যা হতে না হতেই পেট ফুলে মারা যায় তিনটি গাভি। পরিবারের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে নমছেরের পরিবারে থামছে না কান্নার রোল।
বৃহস্পতিবার সকালে নমছের আলীর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঠের তরতাজা ঘাস এনে খাওয়ানোর পর তাদের গাভিগুলো মারা যায়। গাভি হারিয়ে এখন তারা নিঃস্ব।
একই গ্রামের বর্গাচাষি কোবাদ আলীরও একই অবস্থা। মাঠের ঘাস খেয়ে মারা গেছে তার দুটি গরু। ভুলুন্দিয়া গ্রামের ছায়েদুর রহমান জানান, বৃষ্টিতে বেড়ে ওঠা তরতাজা ঘাস খেয়ে শুধু তাদের গ্রাম নয়, ১৫ দিনে পার্শ্ববর্তী কয়েক গ্রামে তিনি ১২টি গরু মারা যেতে দেখেছেন। বুধবার রাতেও মারা গেছে ৮নং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের ধলহরাচন্দ্র গ্রামে একই গোয়ালের তিনটি গরু।
হঠাৎ একের পর এক গরুর মৃত্যুতে আতঙ্কিত চাষিরা। দরিদ্র চাষিদের এমন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি বীমার দাবি জানান উপজেলা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি স্বপন কুমার বাগচী।
মাঠের তরতাজা ঘাস খেয়ে একের পর এক গরু মৃত্যুর ঘটনায় চিন্তিত উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মামুন খান বলেন, দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির ফলে হঠাৎ বৃষ্টিতে মাঠে বেড়ে ওঠা তরতাজা ঘাসের অগ্রভাগে মাটি থেকে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন জমে নাইট্রেট বিষ উৎপন্ন হয়েছে। যার পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় ২০০ ভাগ বেশি। এ ঘাস গরু-ছাগল খাওয়ার ফলে রক্তে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন মিশে রক্ত কণিকা ভেঙে ফেলছে। ফলে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গরু মারা যাচ্ছে। মুষলধারে কয়েকদিন বৃষ্টি হলে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কমে যাবে। আপাতত টানা বর্ষণ না হওয়া পর্যন্ত মাঠের ঘাস না খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, যদি ঘাস খাওয়াতেই হয়, তবে সাত থেকে আট ঘণ্টা রোদে শুকিয়ে তা খাওয়াতে হবে। ঘাস খেয়ে মারা যাওয়া গরুর নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছেন বলে জানান ডা. মামুন খান।
হঠাৎ গরু মৃত্যুর ঘটনায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, খরার পর বৃষ্টিতে বেড়ে ওঠা তরতাজা শামা ঘাসে মারাত্মক নাইট্রেট বিষ উৎপন্ন হয়। যা খাওয়ার ৩-৪ ঘণ্টা পর ক্রিয়া করে। ফলে গরু মারা যায়। চিকিৎসার সময় পাওয়া যায় না। তাই কৃষকদের সচেতন করতে হবে, যাতে তারা এ তরতাজা ঘাস গরুকে না খাওয়ান। এ বিপদের হাত থেকে গরুকে রক্ষা করতে হলে এটাই এখন উপায়।
মন্তব্য করুন