চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে তারা। প্রবল বর্ষণে এসব এলাকায় যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
টানাবর্ষণ হলেই প্রতি বছরই পাহাড়ে থাকা মানুষকে সরাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে গুটিকয়েক পরিবারকে সরানো সম্ভব হলেও বেশির ভাগই থেকে যায়। ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড়ধসে ২২ জনের মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বর্ষণের কারণে প্রতি বছরই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। তবুও এসব এলাকায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে লোকজন বসবাস করছে। আবার অনেক জায়গায় ধসে যাওয়া পাহাড়ি ভূমি বিক্রিও হচ্ছে। এসব জায়গা কিনে সংস্কার করে তৈরি করা হচ্ছে স্থাপনা। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠছে জনবসতি।
জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার নোয়াগাঁও, ইছাখালীর আদিলপুর, গুচ্ছগ্রাম, জাকিরাবাদ, চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের মিশন, মধুছড়ি, কলাবাইজ্জাঘোনা, বনগ্রাম, নতুনপাড়া, আজিজনগর, লালপাহাড়, উপজেলার রাজানগর ও ইসলামপুর, পোমরা, বেতাগী, পারুয়া, দক্ষিণ রাজানগর, লালানগর, হোছনাবাদ, সরফভাটা, পদুয়া, কোদালা, শিলক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বসবাস করে আসছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা মাইকিং ও সচেতন করলেও তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না। তবে সরকারিভাবে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় তারা কোথাও যেতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন বসবাসকারীরা।
২০১৭ সালের ১৩ জুন ইসলামপুর ইউনিয়নের পাহাড়তলি ঘোনায় পাহাড়ধসে ছয় পরিবারের ১৪ জন মানুষ মারা গিয়েছিল।
এ ছাড়া রাজানগর ইউনিয়নে মারা যায় আরও আটজন। সরেজমিনে ওসব স্থানে গিয়ে দেখা যায়, এখনও কয়েকশ' পরিবার ওইসব মৃত্যুপুরীতে বসবাস করছে।
জানতে চাইলে পাহাড়তলি এলাকার স্থানীয় কৃষক মোতালেব মিয়া বলেন, বর্ষা এলেই মানুষকে মাইকিং করে সচেতন করা হয়। তারা মাইকিং করে সরে যেতে বলছে; কিন্তু কোথায় যাব তা তো বলছে না। আমরা গরিব মানুষ যাব কোথায়। কোনো উপায় না পেয়ে ঝুঁকি হলেও এখানে বাধ্য হয়ে থাকছি।
পৌরসভার নোয়াগাঁও এলাকার বাসিন্দা কোহিনুর আক্তার (৬০) বলেন, তার ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি-নাতনিকে নিয়ে পাহাড়ের কোলে থাকেন। কর্ণফুলী নদীভাঙনের কারণে সরফভাটা ইউনিয়নের ভূমিরখীল থেকে ১৮ বছর আগে তারা এসেছেন। নিজেদের কোনো ভিটেবাড়ি নেই। তিনি আরও বলেন, পাহাড়ধসে মৃত্যুর খবর তিনিও জানেন। কিন্তু যেখানে দু'বেলা দু'মুঠো ভাত তাদের ঠিকমতো জোটাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে অন্য কোথাও গিয়ে বসতঘর নির্মাণ তাদের চিন্তার বাইরে। ওই এলাকায় তার মতো অর্ধশতাধিক পরিবার একইভাবে পাহাড়ের কোলে বাধ্য হয়ে বাস করছেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। পাহাড়ধসের কবল থেকে বাঁচাতে জরুরি সময়ে বাসিন্দাদের নিকটস্থ সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানে যেতে বলা হচ্ছে।


বিষয় : পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে ৫ হাজার পরিবার

মন্তব্য করুন