চলনবিলে বৃষ্টির পানি আসার সাথে সাথে শুরু হয়েছে নির্বিচারে ডিমওয়ালা বোয়াল মাছ নিধন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃষ্টি হলেই প্রজননের জন্য বোয়াল মাছ ফাঁকা ফসলি মাঠে আসতেই সৌখিন ও অসাধু জেলেদের শিকারে পরিণত হচ্ছে।

তাদের অভিযোগ, প্রতিদিন চলনবিলের হাট বাজারে প্রকাশ্যে এসব ডিমওয়ালা মা মাছ বিক্রি হলেও স্থানীয় মৎস্য বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার রুহাই গ্রামের আয়নাল হোসেন জানান, জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে ঝুম বৃষ্টির সময় চলনবিলে ডিমওয়ালা মা মাছ বিশেষ করে বোয়াল মাছ নিরাপদে ডিম ছাড়ার জন্য ফসলি মাঠে উঠে আসে। পাশাপাশি পুরুষ বোয়াল মাছ ডিমওয়ালা মা মাছের পেটের ডিমের থলিতে কামড়ে দেয়। মা মাছের ডিম ছাড়ার এ মুহূর্তকেই স্থানীয় ভাষায় মাছের 'পীর লাগা' বলা হয়। আর এ সময়ে দুর্বল ওই মা মাছগুলো সহজেই ধরা পড়ে মাছ শিকারিদের হাতে।

তাড়াশের আমবাড়িয়া গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, মূলত বৃষ্টিপাতের সময় চলনবিলের খাল-বিলে থাকা দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো ডিম ছাড়তে ছোটাছুটি করতে থাকে। এমনকি আট থেকে দশ কেজি ওজনের বোয়ালসহ ওই সব মাছ ফসলি মাঠে উঠে আসে। আর এ সময় সৌখিন এবং অসাধু জেলেরা কোঁচ, জুতি, পলো, তেউরি জাল দিয়ে মাছ ধরেন।

জানা গেছে, চলনবিল অধ্যুষিত পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর ও নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় গত সাতদিনে বৃষ্টির সময় পানির মধ্যে চলাচল ও ডিম পাড়ার সময় অন্ততঃ ১৫০ থেকে ২০০ টি ডিমওয়ালা মা মাছ নিধন করা হয়েছে। যার প্রতিটির ওজন ৫ থেকে ১২ কেজি পর্যন্ত বলে জানা গেছে।

উত্তর বঙ্গের সর্ববৃহত মাছের আড়তের আড়তদার সুজন সরকার জানান, প্রতিদিনই আড়তে ডিমওয়ালা মা মাছ বিশেষ করে বোয়াল মাছ আনা হচ্ছে এবং তা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শুধু এ আড়তেই নয়, চলনবিলের বিভিন্ন হাট-বাজারে ডিমওয়ালা বোয়াল মাছ বিক্রি উন্মুক্ত বিষয় বলে মন্তব্য করেন চাটমোহরের কাঠেংগা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক রবিউল করিম (৫৫)।

তাড়াশের মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের হামকুড়িয়া পশ্চিমপাড়ার মাছ শিকারি আব্দুল মালেক জানান, তিনি ১০ কেজি ওজনের একটা ডিমওয়ালা বোয়াল মাছ ধরেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্র ও শনিবার সকালে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন বিলে ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের অন্তত ৭ থেকে ৮ টি ডিমওয়ালা মা বোয়াল মাছ শিকার করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ জানান, চলনবিল একটি বৃহৎ এলাকা। তাড়াশের এই অংশে ডিমওয়ালা মাছ নিধনের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।