- সারাদেশ
- সুনামগঞ্জে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে মন্ত্রী-এমপি বিরোধ
পরিকল্পনামন্ত্রীর বিস্ময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ
সুনামগঞ্জে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে মন্ত্রী-এমপি বিরোধ
-samakal-60d39d2d827c9.gif)
সাম্প্রতিক সময়ে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে বিরোধ ঘটেছে সরকারি দলের স্থানীয় এমপিদের। নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতায় এবার এই বিরোধের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেলপথের রুট নির্ধারণ।
এ ব্যাপারে জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জের একাধিক এমপির বক্তব্যের পর রেলপথ নিয়ে রেলমন্ত্রীকে আধা সরকারি চিঠি (ডিও লেটার) দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সিলেট-১ (সদর) আসনের এমপি হয়েও সুনামগঞ্জের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের 'নাক গলানোয়' এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান।
শেষ পর্যন্ত 'বন্ধুর' বিস্ময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করলেও সুনামগঞ্জের উন্নয়ন নিয়ে ক্ষমতার টানাটানি ও রাজনৈতিক বিভেদ স্তিমিত হয়নি। অনেকেই মনে করছেন, সুনামগঞ্জের বিষয়ে এভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জড়িয়ে পড়ার নেপথ্যে রয়েছে তার 'বৃহত্তর সিলেটের নেতা' হওয়ার অভিলাষ। আবার স্থানীয় অনেকেই ধারণা করছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর উন্মুক্ত বিবৃতির নেপথ্যে রয়েছে সুনামগঞ্জের মন্ত্রী-এমপিদের 'উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ' লড়াই। স্থানীয় এমপিদের অভিযোগ, সুনামগঞ্জের বড় বড় সব প্রকল্প মন্ত্রী মান্নান কৌশলে নিজের নির্বাচনী এলাকায় করছেন। এতে সংরক্ষিতসহ বাকি পাঁচ এমপির মধ্যে অনেক দিন ধরেই দেখা দিয়েছে হতাশা।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ-৪ (সদর) আসনের জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প তার নির্বাচনী এলাকায় স্থাপনের দাবি তোলেন। সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের জায়গা নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত যেখানে মেডিকেল কলেজ হয়েছে, সে স্থানটি ভৌগোলিক বিবেচনায় ৮০ শতাংশ সদরে এবং ২০ শতাংশ দক্ষিণ সুনামগঞ্জে। চলতি বছর অবশ্য মেডিকেল কলেজের পাঠদান শুরু হয়েছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেল্গক্সে। মেডিকেল কলেজের অবকাঠামোর কাজ চলছে সদর উপজেলা অংশে। মেডিকেল কলেজে নিয়ে মন্ত্রী-এমপির রশি টানাটানি থেকেই সুনামগঞ্জে প্রথম উন্নয়ন বিভেদের প্রকাশ ঘটে।
অবশ্য সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী কাঠইরে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কারণে সেই উত্তাপ কিছুটা কমে আসে। এরপর পাশাপাশি দুই উপজেলার মধ্যে প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা নির্ধারণ নিয়ে আবারও বিরোধ দেখা দেয়। যোগাযোগ ও অবস্থানগত সুবিধার কারণে দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যার পেছনে পরিকল্পনামন্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। কাঠইরে মেডিকেল কলেজের উল্টোদিকে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা আলোচনায় আসে। অন্যদিকে স্থানীয় এমপিরা দেখার হাওরে বিশ্ববিদ্যালয় করার পক্ষে অভিমত দেন। এমন প্রেক্ষাপটে এর চূড়ান্ত অনুমোদন প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে।
স্থানীয় এমপিদের মধ্যে সর্বশেষ দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে প্রস্তাবিত ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেলপথের রুট নির্মাণ নিয়ে। হাওর প্রধান সুনামগঞ্জ জেলার যোগাযোগ উন্নয়নে প্রয়াত রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সুনামগঞ্জ পর্যন্ত লাইন স্থাপনের লক্ষ্যে সমীক্ষা পরিচালনা করে। এরপর একাধিকবার ছাতক-সুনামগঞ্জ (সিলেট থেকে ছাতক পর্যন্ত রেলপথ রয়েছে) রেললাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এসব সমীক্ষায় সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইনের অন্তত তিনটি রুট আলোচনায় আসে। যেগুলোর মধ্যে একটির রুট রয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা দিয়ে।
চলতি মাসের শুরুতে সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচ এমপি মুহিবুর রহমান মানিক, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, ড. জয়া সেনগুপ্তা ও শামিমা শাহরিয়ার (সংরক্ষিত) রেলপথ মন্ত্রী বরাবর একটি ডিও লেটার দেন। এতে তারা আগের অ্যালাইনমেন্ট অনুযায়ী ছাতক বাজার-শিবপুর-হাসনগর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের দাবি জানান।
পাঁচ সংসদ সদস্য জানান, ছাতক থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার লাইন টানলেই রেলের সঙ্গে সহজে যুক্ত হবে সুনামগঞ্জ জেলা সদর। বর্তমানে যেদিকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে ঘোরানো-পেঁচানো ৫০ কিলোমিটার হাওরের দুর্গম এলাকা দিয়ে রেললাইন নির্মাণ করতে হবে। এতে নির্মাণ ব্যয়ও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
সুনামগঞ্জের সরকারি ও বিরোধী দলের পাঁচ এমপির পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ১০ জুন রেলপথ মন্ত্রীকে পৃথক ডিও দেন। এতে তিনি সুনামগঞ্জের এমপিদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রীও ছাতকের সঙ্গে সুনামগঞ্জ ও মোহনগঞ্জ রেলপথ স্থাপনের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ চিঠির অনুলিপি সুনামগঞ্জের অন্য এমপিদের দেওয়া হলেও পরিকল্পনামন্ত্রী তা পাননি বলে জানা গেছে। সুনামগঞ্জের রেললাইন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ডিও দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুই মন্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্বের খবর সাধারণের মধ্যে আলোচিত হয়।
এ পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নানকে 'দীর্ঘ ৫০ বছরের বন্ধু' আখ্যা দিয়ে বিরোধের বিষয় অস্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তবে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান ফেসবুকে পাল্টা জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ নিয়ে সরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি সিলেট ও সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগে অস্বস্তি দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরে গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সার্বিক বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, সম্প্রতি সুনামগঞ্জের পাঁচজন এমপি তার কাছে এসে রেলমন্ত্রীকে ডিও দিতে বলেন। 'সরলমনে' ডিও দিয়েছেন উলেল্গখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চিঠি দেওয়ার আগে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা বলা উচিত ছিল।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক। তিনি বলেন, সংসদে বারবার আমি ছাতক-সুনামগঞ্জ রেলপথের কথা বলেছি। ছাতক-শিবগঞ্জ-শ্রীপুর-বেতগঞ্জ হয়ে রেললাইন সুনামগঞ্জে আসার সম্ভাব্যতা নিয়ে আগেই সমীক্ষা হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ থেকে রেললাইন সুনামগঞ্জে আনতে হলে অনেক মানুষের বসতি তুলে দিতে হবে। ব্যয়ও বাড়বে। অথচ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাহেব সেদিকেই মত দিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, এ পথের মানুষজন সড়কপথেই চলাচল করে আসছেন, তাদের রেলপথের প্রয়োজন নেই।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, ছাতক থেকে দোয়ারাবাজারের শিবপুর হয়ে রেলপথ এলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হবে না। দোয়ারাবাজারের অসংখ্য মানুষ বরং এতে উপকৃত হবেন।
এ ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ছাতক-সুনামগঞ্জের রেলের অ্যালাইনমেন্ট নিয়ে রেলমন্ত্রী বা রেল সচিব কারও সঙ্গে কথা বলিনি, কোনো চিঠিও দেইনি। রেল মন্ত্রণালয়ে বিজ্ঞ মন্ত্রী আছেন, সচিব আছেন। তাদের টেকনিশিয়ানরা স্টাডি করবেন, পথ নির্ধারণ করবেন। সরকার বা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করা হবে আমার কাজ। তিনি বলেন, আমি রেল মন্ত্রণালয়কে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের কথা বারবার বলেছি। কোন পথে রেল যাবে, মৌখিকভাবে কিংবা লিখিতভাবে কাউকে বলিনি।
এ ব্যাপারে জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জের একাধিক এমপির বক্তব্যের পর রেলপথ নিয়ে রেলমন্ত্রীকে আধা সরকারি চিঠি (ডিও লেটার) দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সিলেট-১ (সদর) আসনের এমপি হয়েও সুনামগঞ্জের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের 'নাক গলানোয়' এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান।
শেষ পর্যন্ত 'বন্ধুর' বিস্ময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করলেও সুনামগঞ্জের উন্নয়ন নিয়ে ক্ষমতার টানাটানি ও রাজনৈতিক বিভেদ স্তিমিত হয়নি। অনেকেই মনে করছেন, সুনামগঞ্জের বিষয়ে এভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জড়িয়ে পড়ার নেপথ্যে রয়েছে তার 'বৃহত্তর সিলেটের নেতা' হওয়ার অভিলাষ। আবার স্থানীয় অনেকেই ধারণা করছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর উন্মুক্ত বিবৃতির নেপথ্যে রয়েছে সুনামগঞ্জের মন্ত্রী-এমপিদের 'উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ' লড়াই। স্থানীয় এমপিদের অভিযোগ, সুনামগঞ্জের বড় বড় সব প্রকল্প মন্ত্রী মান্নান কৌশলে নিজের নির্বাচনী এলাকায় করছেন। এতে সংরক্ষিতসহ বাকি পাঁচ এমপির মধ্যে অনেক দিন ধরেই দেখা দিয়েছে হতাশা।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ-৪ (সদর) আসনের জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প তার নির্বাচনী এলাকায় স্থাপনের দাবি তোলেন। সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের জায়গা নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত যেখানে মেডিকেল কলেজ হয়েছে, সে স্থানটি ভৌগোলিক বিবেচনায় ৮০ শতাংশ সদরে এবং ২০ শতাংশ দক্ষিণ সুনামগঞ্জে। চলতি বছর অবশ্য মেডিকেল কলেজের পাঠদান শুরু হয়েছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেল্গক্সে। মেডিকেল কলেজের অবকাঠামোর কাজ চলছে সদর উপজেলা অংশে। মেডিকেল কলেজে নিয়ে মন্ত্রী-এমপির রশি টানাটানি থেকেই সুনামগঞ্জে প্রথম উন্নয়ন বিভেদের প্রকাশ ঘটে।
অবশ্য সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী কাঠইরে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কারণে সেই উত্তাপ কিছুটা কমে আসে। এরপর পাশাপাশি দুই উপজেলার মধ্যে প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা নির্ধারণ নিয়ে আবারও বিরোধ দেখা দেয়। যোগাযোগ ও অবস্থানগত সুবিধার কারণে দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যার পেছনে পরিকল্পনামন্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। কাঠইরে মেডিকেল কলেজের উল্টোদিকে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা আলোচনায় আসে। অন্যদিকে স্থানীয় এমপিরা দেখার হাওরে বিশ্ববিদ্যালয় করার পক্ষে অভিমত দেন। এমন প্রেক্ষাপটে এর চূড়ান্ত অনুমোদন প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে।
স্থানীয় এমপিদের মধ্যে সর্বশেষ দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে প্রস্তাবিত ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেলপথের রুট নির্মাণ নিয়ে। হাওর প্রধান সুনামগঞ্জ জেলার যোগাযোগ উন্নয়নে প্রয়াত রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সুনামগঞ্জ পর্যন্ত লাইন স্থাপনের লক্ষ্যে সমীক্ষা পরিচালনা করে। এরপর একাধিকবার ছাতক-সুনামগঞ্জ (সিলেট থেকে ছাতক পর্যন্ত রেলপথ রয়েছে) রেললাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এসব সমীক্ষায় সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইনের অন্তত তিনটি রুট আলোচনায় আসে। যেগুলোর মধ্যে একটির রুট রয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা দিয়ে।
চলতি মাসের শুরুতে সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচ এমপি মুহিবুর রহমান মানিক, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, ড. জয়া সেনগুপ্তা ও শামিমা শাহরিয়ার (সংরক্ষিত) রেলপথ মন্ত্রী বরাবর একটি ডিও লেটার দেন। এতে তারা আগের অ্যালাইনমেন্ট অনুযায়ী ছাতক বাজার-শিবপুর-হাসনগর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের দাবি জানান।
পাঁচ সংসদ সদস্য জানান, ছাতক থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার লাইন টানলেই রেলের সঙ্গে সহজে যুক্ত হবে সুনামগঞ্জ জেলা সদর। বর্তমানে যেদিকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে ঘোরানো-পেঁচানো ৫০ কিলোমিটার হাওরের দুর্গম এলাকা দিয়ে রেললাইন নির্মাণ করতে হবে। এতে নির্মাণ ব্যয়ও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
সুনামগঞ্জের সরকারি ও বিরোধী দলের পাঁচ এমপির পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ১০ জুন রেলপথ মন্ত্রীকে পৃথক ডিও দেন। এতে তিনি সুনামগঞ্জের এমপিদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রীও ছাতকের সঙ্গে সুনামগঞ্জ ও মোহনগঞ্জ রেলপথ স্থাপনের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ চিঠির অনুলিপি সুনামগঞ্জের অন্য এমপিদের দেওয়া হলেও পরিকল্পনামন্ত্রী তা পাননি বলে জানা গেছে। সুনামগঞ্জের রেললাইন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ডিও দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুই মন্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্বের খবর সাধারণের মধ্যে আলোচিত হয়।
এ পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নানকে 'দীর্ঘ ৫০ বছরের বন্ধু' আখ্যা দিয়ে বিরোধের বিষয় অস্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তবে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান ফেসবুকে পাল্টা জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ নিয়ে সরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি সিলেট ও সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগে অস্বস্তি দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরে গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সার্বিক বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, সম্প্রতি সুনামগঞ্জের পাঁচজন এমপি তার কাছে এসে রেলমন্ত্রীকে ডিও দিতে বলেন। 'সরলমনে' ডিও দিয়েছেন উলেল্গখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চিঠি দেওয়ার আগে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা বলা উচিত ছিল।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক। তিনি বলেন, সংসদে বারবার আমি ছাতক-সুনামগঞ্জ রেলপথের কথা বলেছি। ছাতক-শিবগঞ্জ-শ্রীপুর-বেতগঞ্জ হয়ে রেললাইন সুনামগঞ্জে আসার সম্ভাব্যতা নিয়ে আগেই সমীক্ষা হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ থেকে রেললাইন সুনামগঞ্জে আনতে হলে অনেক মানুষের বসতি তুলে দিতে হবে। ব্যয়ও বাড়বে। অথচ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাহেব সেদিকেই মত দিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, এ পথের মানুষজন সড়কপথেই চলাচল করে আসছেন, তাদের রেলপথের প্রয়োজন নেই।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, ছাতক থেকে দোয়ারাবাজারের শিবপুর হয়ে রেলপথ এলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হবে না। দোয়ারাবাজারের অসংখ্য মানুষ বরং এতে উপকৃত হবেন।
এ ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ছাতক-সুনামগঞ্জের রেলের অ্যালাইনমেন্ট নিয়ে রেলমন্ত্রী বা রেল সচিব কারও সঙ্গে কথা বলিনি, কোনো চিঠিও দেইনি। রেল মন্ত্রণালয়ে বিজ্ঞ মন্ত্রী আছেন, সচিব আছেন। তাদের টেকনিশিয়ানরা স্টাডি করবেন, পথ নির্ধারণ করবেন। সরকার বা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করা হবে আমার কাজ। তিনি বলেন, আমি রেল মন্ত্রণালয়কে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের কথা বারবার বলেছি। কোন পথে রেল যাবে, মৌখিকভাবে কিংবা লিখিতভাবে কাউকে বলিনি।
মন্তব্য করুন