খুলনার ট্যাঙ্ক রোডের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত হন গত সপ্তাহে। বৃহস্পতিবার রাতে তার তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরিবারের অন্যরাও করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া যায়নি। ফেসবুকে দেখে এক সন্তান ফোন দেয় খুলনা অক্সিজেন ব্যাংকের হটলাইনে। আধা ঘণ্টার মধ্যে অক্সিজেন ব্যাংকের সদস্যরা তার বাসায় পৌঁছে যান।

স্বেচ্ছাসেবী সাফায়েত সরদার বলেন, আমরা নজরুল ইসলামের বাসায় গিয়ে দেখি, চারজনই শয্যাশায়ী। তার অক্সিজেন লেভেল ৪০ থেকে ৪৫-এর মধ্যে ওঠানামা করছে। ওই মুহূর্তে অক্সিজেন দিয়ে ইজিবাইকে করে তাকে খুলনা করোনা হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু শয্যা খালি না থাকায় তাকে গাজী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা এখন উন্নতির দিকে।

২৩ জুন বটিয়াঘাটা উপজেলার বিরাট বাজার এলাকা থেকে বৃদ্ধ খাদিজা বেগমকে নিয়ে খুলনা করোনা হাসপাতালে গিয়েছিলেন নাতি নাজমুল মোল্লা। সেখানে শয্যা ফাঁকা না থাকায় যান জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু শয্যা না থাকায় নিরুপায় হয়ে নিজে যান অক্সিজেন ব্যাংকের কার্যালয়ে। স্বেচ্ছাসেবকরা তাকে অক্সিজেন সংযোগ দেন। শারীরিক থেরাপির পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। এরপর উপজেলার বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন এই নারী।

নাজমুল মোল্লা সমকালকে বলেন, ওই দিন কোনো হাসপাতালে শয্যা ছিল না। হাসপাতাল থেকেই একজন অক্সিজেন ব্যাংকের ঠিকানা দিয়েছিল। ওই দিন অক্সিজেন না পেলে নানি হয়তো বাঁচতেন না।

শুধু নজরুল ইসলাম বা খাদিজা বেগমই নন, করোনায় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিরামহীন ছুটে চলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'খুলনা অক্সিজেন ব্যাংক'-এর সদস্যরা। হটলাইনে ফোন পেয়ে তারা রোগীর বাসায় অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছেন। যাদের অবস্থা বেশি খারাপ, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে সহযোগিতা করছেন। ২৬ জুন এক দিনেই ২৯ জনের বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছে সংগঠনটি। আর গত বছরের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত অক্সিজেন সেবা দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৩০০ রোগীকে। করোনাকালীন অক্সিজেনের তীব্র সংকটে সংগঠনটি খুলনার অসুস্থ রোগীদের অন্যতম ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে।

খুলনা নগরীর শেখপাড়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসা সড়কে খুলনা অক্সিজেন ব্যাংকের কার্যালয়। কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে হটলাইনে অক্সিজেনের জন্য অনুরোধ আসছে।

স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, করোনা সংক্রমণ শুরুর পর গত বছরের ৭ এপ্রিল থেকে অক্সিজেন ব্যাংক কাজ শুরু করে। প্রথমে পাঁচ সিলিন্ডার দিয়ে কার্যক্রম শুরু। বর্তমানে সিলিন্ডারের সংখ্যা ১৪২টি। প্রায় ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক ২৪ ঘণ্টা পালা করে কাজ করছেন। তাদের বেশিরভাগই ছাত্র। একজন পুলিশ সদস্যকে পাওয়া গেছে, তিনি আট ঘণ্টা অফিসে দায়িত্ব পালন করেন। বাকি সময় স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সিলিন্ডার পৌঁছে দেন রোগীদের বাড়িতে। ফেসবুকে সংগঠনটির তৎপরতা দেখে বিভিন্ন মানুষ সহায়তার হাত বাড়ান। মানুষের আর্থিক সহযোগিতা দিয়েই সংগঠনের কার্যক্রম চলছে।

আরও সিলিন্ডার প্রয়োজন, সঙ্গে যানবাহন :প্রতিবেদক কার্যালয়ে বসে থাকতে থাকতেই সিলিন্ডার ফুরিয়ে যায়। এরপরও বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোন আসতে থাকে। স্বেচ্ছাসেবক সরদার মুনসুর আলী বলেন, সব সিলিন্ডার রোগীদের বাসায়। এরপর ফোন এলে পুরোনো রোগীদের ফোন দিয়ে সিলিন্ডার লাগবে কিনা শুনি। না লাগলে এনে অন্য রোগীকে দিই। এতে অনেক রোগী কষ্ট পান। আমাদের দৈনিক যে চাহিদা, তাতে কমপক্ষে ৫০০ সিলিন্ডার প্রয়োজন। তিনি বলেন, সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার যানবাহনের সংকটও প্রকট। শুধু যানবাহনের অভাবে অনেকের বাসায় অক্সিজেন পৌঁছানো যায় না।

অক্সিজেন ব্যাংকের সভাপতি সালাহউদ্দিন সবুজ বলেন, আমাদের আরও ৩০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন। আর এগুলো পৌঁছে দিতে প্রয়োজন যানবাহন। সিলিন্ডারের সঙ্গে ক্যানোলা, ফ্লো মিটার, মাস্ক, অক্সিমিটারও খুব জরুরি।