- সারাদেশ
- মানুষের সঙ্গে মিশে গেছে হনুমানটি
মানুষের সঙ্গে মিশে গেছে হনুমানটি

দলছুট হনুমানের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা...ছবিটি রোববার দুপুরে গোয়ালন্দ বাজার রেলগেট এলাকা থেকে তোলা হয়েছে
মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে দলছুট একটি হনুমানকে গোয়ালন্দ শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে। প্রথমদিকে প্রাণীটি মানুষজন দেখলেই গাছের ডালে, ঘরের চালে, ভবনের ছাদে উঠে যেত। অনেকে আবার বিরক্ত হয়ে হনুমানটিকে তাড়িয়ে দিত। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে হনুমানটি অনেকটা স্বাভাবিকভাবে মিশে গেছে লোকজনের সঙ্গে। টিকে থাকার তাগিদে সঙ্গীবিহীন হনুমানটি মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয়দের ধারণা, দক্ষিণাঞ্চল থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আসা কোন একটি যানবাহনের ছাদে উঠে হনুমানটি এ এলাকায় চলে এসেছে। কারণ এভাবে এ এলাকায় হনুমান চলে আসার ঘটনা আগেও ঘটেছে। নিরাপদ আবাসস্থল ও খাদ্যের অভাবে এসব প্রাণী ফলবাহী ট্রাকে উঠে এ এলাকায় চলে আসছে বলে অনেকে মনে করছেন।
রোববার বেলা ১টার দিকে হনুমানটিকে গোয়ালন্দ বাজার রেলগেট এলাকায় দেখা যায়। এ সময় ক্ষুধার্ত হনুমানটি মজিবর রহমান নামের এক ফল ব্যবসায়ীর দোকানে ঢুকে পড়ে। দোকানদার তাকে একটি আনার ফল দিলে হনুমানটি দীর্ঘ সময় ধরে সেটা খায়। এ সময়ের মধ্যে হনুমানটিকে দোকানের অন্য কোন কিছু খেতে কিংবা ক্ষতি করতে দেখা যায়নি। এরপর হনুমানটি পাশের একটি খাবার হোটেলে গিয়ে মানুষের মতো বেঞ্চে বসে পড়ে।
নারী হোটেল মালিক সহিতুন নেছা হনুমানটিকে তাড়িয়ে না দিয়ে কিছু খাবার খেতে দেন। এ সময় আরও অনেকেই হনুমানটিকে আম, কলা, বাদাম, পাউরুটি ইত্যাদি খেতে দেন। প্রাণীটিকে সেসব খাবার খেয়ে সেখান থেকে চুপচাপ চলে যেতে দেখা যায়। এ সময় হোটেলের অন্য ক্রেতারা বিষয়টি বেশ উপভোগ করেন। কিন্তু কেউ হনুমানটিকে বিরক্ত করেননি।

এর আগে শুক্রবার দুপুরের প্রচণ্ড রোদে ক্লান্ত হনুমানটি গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি দোকানে ঢুকে মেঝেতে শুয়ে পড়ে বলে জানা যায়। দোকানদার ফ্যান ছেড়ে দিলে হনুমানটি ঠাণ্ডা বাতাসে দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়। জেগে ওঠার পর রফিকুল ইসলাম নামের এক যুবক হনুমানটির মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেন। হনুমানটিও চুপচাপ সেই আদর উপভোগ করে বলে স্থানীয়রা জানায়।
স্থানীয় যুবক মুক্তার মাহমুদ, তৌহিদ হোসেন, রাজু আহমেদসহ অনেকেই জানান, মানুষের সঙ্গে এভাবে স্বাভাবিকভাবে কোন হনুমানের মিশে যাওয়া এর আগে তারা দেখেননি। লোকজনের মানবিকতা দেখে তাদের খুব ভালো লেগেছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, হনুমানটি হয়তো কোন ট্রলারে করে সুন্দরবন এলাকা থেকে এদিকে চলে এসেছে। এখানে আসার পর সে সঙ্গীবিহীন হয়ে গেছে। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে হনুমানটি মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করছে। কারও কোন ক্ষতি করছে না। ক্ষতি করে না এমন কোন প্রাণী পেলে স্বভাবতই মানুষও ভালোবাসে।
তিনি আরো আরও বলেন, হনুমান ও বানরের জ্ঞানবুদ্ধি অনেক প্রবল। ওরা বোঝে কোন পরিবেশে কীভাবে নিজেকে খাপ খাওয়াতে হয়।
মন্তব্য করুন