আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চেয়ে পাড়ায়-পাড়ায় মিছিল
শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চেয়ে পাড়ায়-পাড়ায় মিছিল। ছবি: সমকাল
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২০:০৬ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২০:২৯
প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রার্থীর পক্ষে মিছিল-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চেয়ে পাড়ায়-পাড়ায় মিছিল করতে দেখা গেছে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এসব মিছিল থেকে শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চাওয়া হয়।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শামীম ওসমানের অনুসারী আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গত শুক্রবার বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের ৯টি ওয়ার্ডে শামীম ওসমানের পক্ষে একযোগে খণ্ড খণ্ড মিছিল করেন। সিদ্ধিরগঞ্জের ৩ নম্বার ওয়ার্ডের সানারপাড় এলাকায় মহানগর শ্রমিক লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন মোল্লার নেতৃত্বে একটি মিছিল হয়। সিদ্ধিরগঞ্জের ২ নম্বার ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল হয়। মিছিল শুরুর আগে শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'শামীম ওসমানের ভোটের প্রচারণায় আমরা মিছিল করব।'
অপরদিকে ফতুল্লা অংশের কাশীপুর, এনায়েতনগর, তল্লা, কায়েমপুর, সস্তাপুর, ফতুল্লা বাজার ও কুতুবপুরসহ অন্যান্য এলাকায়ও মিছিল বের করেন করেন তার অনুসারীরা।
ফতুল্লা বাজার এলাকায় ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলীর নেতৃত্বে এবং কায়েমপুর এলাকায় থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফায়জুল ইসলামের নেতৃত্বে মিছিল হয়। মীর সোহেল আলী জানান, ‘আমরা নৌকার পক্ষে বা শামীম ভাইয়ের পক্ষে মিছিল করিনি। আমরা সন্ত্রাস নৈরাজ্যের পক্ষে মিছিল করেছি। এ ধরনের মিছিল নির্বাচনী আচরণবিধির বিপক্ষে না।’
তল্লা এলাকায় যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লবের নেতৃত্বে শামীম ওসমানের পক্ষে মিছিল করেন তার অনুসারী নেতাকর্মীরা। কুতুবপুরে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর হোসেনে মীরুর নেতৃত্বে মিছিল হয়। মীর হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ও চাঁদাবাজির বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
কাশীপুর ইউনিয়নে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদলের ছেলে নাজমুল হোসেন সাজনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা মিছিল করেন। কাশিপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের কাশিপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র কমিটির পক্ষ থেকে বের করা মিছিলের ব্যানারে সাইফুল্লাহ বাদল ও শামীম ওসমানের ছবি ছিলো। এ ব্যানারে লেখা ছিলো, ‘জননেতা এ কে এম শামীম ওসমানের সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন।’
প্রতিটি মিছিল থেকে শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে স্লোগান দেওয়া হয়। এসব মিছিলে শামীম ওসমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ও নৌকা প্রতীক ব্যবহার করা হয়।
এ বিষয়ে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী বলেন, 'যারা ব্যানারে ভোট চাওয়ার ব্যাপারে লিখেছে এবং ভোট চেয়ে স্লোগান দিয়েছে তারা অতি-উৎসাহী। শামীম ভাই আমাদের কোনো প্রকার প্রচারের জন্য বলেননি। আমরা নিজেদের উদ্যোগে কেবল আনন্দ মিছিল করেছি। ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটি এলাকায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। এটা শামীম ওসমানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আনন্দ মিছিল।
শুধু মিছিল না ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক জুড়ে শামীম ওসমানের হাত উঁচিয়ে ধরা ছবিসহ বড় বড় ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। তবে শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে কয়েকটি ব্যানার ও ফেস্টুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, সানারপাড় ও চিটাগাং রোড এলাকায় লাগানো হলেও শুক্রবার বিকেলের পর সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।
এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন, 'আমি নিজেও কয়েকটি পাড়া-মহল্লায় শামীম ওসমানের কর্মী-সমর্থকদের মিছিল করতে দেখেছি। এসময় তারা নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। এটি পুরোই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। নির্বাচন কমিশনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১২ ধারায় বলা আছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না।’
আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, 'নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে তার কোনো কর্মী-সমর্থক মিছিল বা ভোট প্রার্থনা করতে পারবেন না। এটা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কেউ মিছিল করেছে, এ বিষয়ে অবগত নই। তবে এমনটা হয়ে থাকলে তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।'
এ বিষয়ে শামীম ওসমানের মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে মেসেজে তার আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে বক্তব্য নিতে চাইলেও কোন রিপ্লে দেওয়া হয়নি।