কঠোর লকডাউন শিথিলের প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ফেরি ও লঞ্চে যাত্রীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষকে। আজ থেকেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী ২১ জেলার মানুষ। 

স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ফেরি ও লঞ্চে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের নির্দেশ মানছেন না শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি-কাওড়াকান্দি লঞ্চ চালক ও শ্রমিকেরা। তারা অর্ধেকের বেশি যাত্রী ওঠাতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন। যাত্রীরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে উঠে পড়ছেন। নৌপুলিশ যাত্রীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। 

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটায় শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, মাঝিকান্দি থেকে ছেড়ে আসা ২৩০ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতার 'এমভি ঐশী' নামের লঞ্চটিতে অর্ধেক যাত্রী হিসেবে ১১৫ জনের জায়গায় ২৫০ জন যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে ভিড়ে। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের দায়ে শিমুলিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক সিরাজুল কবির লঞ্চটিকে আজকের মতো আটকে রাখেন। 

স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ফেরি ও লঞ্চে যাত্রী পারাপার করার ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শিমুলিয়া ফেরিঘাট ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শিমুলিয়া ঘাট হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে যাত্রা করেন ২১ জেলার মানুষ। বুধবার থেকেই এই ঘাটে চাপ বাড়তে থাকে। লকডাউন শিথিল ও গণপরিবহন চালু হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে ঘাটে হঠাৎ করেই যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বেলা ১২টা পর্যন্ত ঘাটে যানবাহন ও মানুষের জটলা বেঁধে যায়। শিমুলিয়া ঘাট পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে ৪ শতাধিকের বেশি যানবাহন। 

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার লকডাউনের ঘোষণা দিলেও মানুষের মধ্যে তেমন সতর্কতা নেই। ঢাকা থেকে আসা যাত্রীদের ভিড় প্রতিটি ফেরিতে। গায়ে গা ঘেঁষে, কেউ মাস্ক পরে, আবার কেউ মাস্ক ছাড়া পদ্মা নদী পার হওয়ার জন্য ফেরি ও লঞ্চঘাটে অপেক্ষা করছেন। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়নি।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, শিমুলিয়া-ভাঙা মোড় দিয়ে যাত্রী ও পরিবহনগুলো ঘাটের দিকে ছুটছে। ফেরিঘাটের প্রতিটি সংযোগ সড়কেই যানবাহনের সারি। পার্কিং ইয়ার্ড ও নৌপুলিশ মাঠেও যানবাহনের জটলা। ফেরি ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় ব্যক্তিগত গাড়ি, পরিবহন ও মালবাহী ট্রাক। 

সকাল ৯টার দিকে শাহানাজ আক্তার নামে প্রাইভেট কারের এক যাত্রী বলেন, লকডাউন শিথিল হয়েছে। সামনে ঈদ। সবাই বাড়িতে ফিরবে। তখন ভিড় আরও বাড়বে। তাই পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে যশোরের গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন তিনি।

আলেয়া বেগম নামে এক নারী জানান, তার বোন অসুস্থ। লকডাউনের আগে রাজধানীর রামপুরায় বোনকে দেখতে গিয়েছিলেন। যানবাহন ও নৌচলাচল শুরু হয়েছে। তাই গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর শহরে যাচ্ছেন তিনি।

সোহরাব ঢালী নামে খুলনাগামী এক ব্যাক্তি বলেন, লকডাউনের আগে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ছিলাম। লকডাউনের কারণে খুলনার গ্রামের বাড়িতে ফেরা যায়নি। দুদিন পর ঘাটে ভিড় বাড়বে। আগেভাগেই গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছি। 

বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়াত আহমেদ সমকালকে বলেন, লকডাউন শেষ হয়েছে। সামনে ঈদ। গতকাল বুধবার রাত থেকে ঘাটে প্রচণ্ড যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে চাপও বাড়ছে। ঘাটে ছোটবড় সব মিলিয়ে প্রায় চার শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষা আছে। ছোট বড় ১১টি ফেরিতে যাত্রী ও যানবাহন পার হচ্ছে। চাপ বাড়লে ফেরির সংখ্যাও বাড়ানো হবে।  

শিমুলিয়া ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. জাকির হোসেন বলেন, অন্য দিনের তুলনায় ঘাটে চাপ বেড়েছে। শুক্রবার থেকে চাপ আরও বাড়বে মনে হচ্ছে।