বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের নামে প্রাচ্যের রাণীর সৌন্দর্য্যহানি করতে দেওয়া হবে না বলে দাবি করেছেন নাগরিক সমাজ। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে সিআরবি সাত রাস্তার মোড়ে চট্টগ্রামের 'নাগরিক সমাজ' বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি করেছেন।

শুধু সমাবেশেই নয়, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো চট্টগ্রামে। এমনকি চট্টগ্রামের বাইরে অবস্থানকারী লোকজনও ক্ষোভ জানাচ্ছেন এ পরিকল্পনায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভেসে যাচ্ছে সমালোচনার ঝড়ে। সিআরবিকে বাঁচাতে আন্দোলনে নেমে পড়েছেন রাজনৈতিক, সামাজিক, মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠনও। 

সাধারণ মানুষের সঙ্গে সুর মিলিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও সিআরবিতে হাসপাতাল তৈরির কঠোর বিরোধিতা করেন। 

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'হাসপাতালের জন্য জমি প্রয়োজন হলে সিটি করপোরেশন থেকে মোহরায় দুই থেকে তিন একর জমি দিতে রাজি আছি আমরা। তবুও সিআরবিকে ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণ করা যাবে না।' 

সিআরবি এলাকা হেরিটেজ জোন হিসেবে বন্দরনগরীর মহাপরিকল্পনায় 'সংরক্ষিত এলাকা' হওয়ায় সেখানে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনার অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। 

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানিয়েছেন, 'মাস্টারপল্গ্যানে সিআরবিকে হেরিটেজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই এটি সংরক্ষিত এলাকা। আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনার অনুমোদন দেব না। সিআরবি সারাদেশের মধ্যে অন্যতম নান্দনিক স্থান। আমাদের আর কোনো ওপেন স্পেস নেই। সিডিএর কাছে আসুক, হাসপাতালের জায়গা আমরা খুঁজে দেব, কিন্তু সিআরবিতে স্থাপনা নয়।'

নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ সমাবেশ 

চট্টগ্রামের 'ফুসফুস' হিসেবে পরিচিত সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

সিআরবির সাত রাস্তা মোড়ে 'লাংস অব চট্টগ্রাম- চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে সিআরবিতে হাসপাতাল চাই না' শিরোনাম দিয়ে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। 

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, পরিবেশবিদ ও কর্ণফুলী গবেষক ড. ইদ্রিস আলী, ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব কাজী মহসিন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. ইউনুস, আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান, মিলি চৌধুরী প্রমুখ। 


সমাবেশে কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, বহুমাত্রিক কারণে চট্টগ্রামকে প্রাচ্যের রাণী বলা হয়। এখানে নদ-নদী, সাগর ও পাহাড় ছাড়াও সবুজ বনবনানী রয়েছে। বহুমাত্রিক বৈচিত্র রয়েছে চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসেবে পরিচিত সিআরবিতেও। চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ডিসি হিল। কিন্তু সেটা হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের সাথে ডিসি হিল রক্ষার আন্দোলনও যুক্ত করা হবে।

সিআরবি নিয়ে শৈশবের স্মৃতিচারণ করে আবুল মোমেন বলেন, এখানে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। সিআরবি প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস হয় এমন স্থাপনা নির্মাণ সমীচীন হবে না। এছাড়া পিপিপির ভিত্তিতে হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। যারা হাসপাতাল করবেন তারা নিশ্চয় ব্যাংক থেকে টাকা নেবেন। এসব টাকাতো পাবলিকের টাকা। আর পাবলিকের টাকা দিয়ে পাবলিকের শহরের সৌন্দর্যহানি করা হবে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।

সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবারও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিকেলে সিআরবির সাত রাস্তা মোড়ে 'সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি বাঁচতে হবে' এমন শিরোনামে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম। একই সময়ে সিআরবি চত্বরে প্রতবাদী সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালন করবে চট্টগ্রামের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক স্কোয়াড।