- সারাদেশ
- এক হাসপাতালেই নিশ্চিহ্ন হবে মুক্তিযুদ্ধের বহু স্মৃতি
চট্টগ্রামের 'ফুসফুস' সিআরবি
এক হাসপাতালেই নিশ্চিহ্ন হবে মুক্তিযুদ্ধের বহু স্মৃতি

সিআরবিতে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে তৈরি স্মৃতিস্তম্ভ - সমকাল
চট্টগ্রাম নগরীর 'ফুসফুস'খ্যাত সিআরবিতে এক হাসপাতালেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সমাধিস্থলসহ বহু স্মৃতিচিহ্ন। হাসপাতাল তৈরির জন্য যে ছয় একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে রয়েছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাকসু) জিএস আবদুর রবের সমাধি। মুক্তিযুদ্ধে আরেক শহীদ শেখ নজির আহাম্মদের সমাধিস্থলও এখানে। হাসপাতাল হলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ডবল এম এ মনোয়ার হোসেন, বিমল সিং, ফখরুল আলম, মো. সিরাজউদ্দিন, আলী নূর চৌধুরী, মহিউদ্দিন, নুরন্নবী চৌধুরী ও গঙ্গারামের স্মৃতিস্তম্ভও বিলীন হয়ে যাবে। শহীদ আবদুর রবের নামে থাকা রেলওয়ে কলোনিটিও ধ্বংস হয়ে যাবে। একই সঙ্গে হারিয়ে যাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন রফিকের তৎকালীন কমান্ড অফিস কাঠের বাংলোটি। মুক্তিযুদ্ধের এ রকম অসংখ্য স্মৃতিবিজড়িত স্থান বাঁচাতে এবার মাঠে নেমেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে সিআরবিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের সব আয়োজন প্রায় সম্পন্ন। ইউনাইটেড হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করেছে রেলওয়ে। চুক্তি অনুযায়ী রেলওয়ে সিআরবির ছয় একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সিআরবি সাত রাস্তার মাথা থেকে একটি সরু সড়ক চলে গেছে ২২ নম্বর এনায়েত বাজারের দিকে। এ সড়কটির নাম শহীদ নজির আহাম্মদ সড়ক। এ সড়ক দিয়ে সাত রাস্তার মোড় থেকে একটু নিচে নামতেই হাতের ডানে সমাহিত হয়ে আছেন শহীদ শেখ নজির আহাম্মদ। তার স্মৃতিফলকে লেখা রয়েছে- '১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন। তাদেরই একজন শহীদ শেখ নজির আহাম্মদ। ৫ এপ্রিল, একাত্তর সাল।' এ সমাধিস্থল ফেলে একটু সামনে এগোতেই ত্রিকোণ রাস্তার মোড়ে বর্ণক সংসদ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের তৈরি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভ ও ফলক চোখে পড়ে। সেই ফলকে স্মরণ করা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চাকসুর জিএস শহীদ আবদুর রব, ডবল এম এ মনোয়ার হোসেন, বিমল সিং, ফখরুল আলম, মো. সিরাজউদ্দিন, আলী নূর চৌধুরী, মহিউদ্দিন, নুরন্নবী চৌধুরী ও গঙ্গারামকে। এই স্মৃতিস্তম্ভ ফেলে আরও সামনে গিয়ে হাতের ডানে পড়বে শহীদ আবদুর রব কলোনি। সেই কলোনির পাশে রয়েছে রেলওয়ে জামে মসজিদ। মসজিদের পাশেই মহান মুক্তিযুদ্ধের সাহসী সেনাপতি চাকসুর জিএস শহীদ রবের সমাধি। তার ঠিক পাশেই মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন রফিকের কমান্ড অফিস কাঠের বাংলো। সাত রাস্তার মোড়ের জিপের পেছনে টেনে পাকিস্তানি বাহিনী তৎকালীন ওসি কোতোয়ালি খালেককে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় সিআরবি এলাকা। ইউনাইটেডকে হাসপাতাল করার জন্য রেলওয়ে সিআরবির যে ছয় একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে, সেই জায়গার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে।
এসব বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মুজাফফর আহমদ সমকালকে বলেন, সিআরবির যে জায়গাটি বেসরকারি হাসপাতাল করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, ৯ বছর আগে সেই জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ করার জন্য চট্টগ্রামের ডিসি প্রস্তাব দিলেও রেলওয়ে পরিবেশের ক্ষতি হবে বলে মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গাটি দেয়নি। এখন সেই জায়গা বেসরকারি হাসপাতাল করার জন্য বরাদ্দ দিয়েছে রেলওয়ে। আমাদের প্রশ্ন- স্মৃতিস্তম্ভ করলে পরিবেশের ক্ষতি হবে, হাসপাতাল করলে ক্ষতি হবে না? তিনি বলেন, সিআরবির এই জায়গায় শহীদ আবদুর রবসহ বেশ কয়েকজন শহীদের সমাধি রয়েছে। এখানে হাসপাতাল হলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সমাধিস্থলগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। শহীদ স্মৃতিবিজড়িত এ স্থানটিতে হাসপাতাল কেন, কোনো স্থাপনাই নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।
শহীদ আবদুর রবের ভাগিনা মো. মুক্তার বলেন, চাচার নামে রেলওয়ের একটি কলোনির নামকরণ করা হয়েছে। এখন হাসপাতাল করতে এসব তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চাচা ছাড়াও এখানে আরও অনেক শহীদের স্মৃতি রয়েছে। সরকারের কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো নিশ্চিহ্ন না করার জন্য শহীদ পরিবার থেকে আবেদন থাকল।
মুক্তিযোদ্ধা, পরিবেশবিদ ও কর্ণফুলী-গবেষক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, সিআরবি চট্টগ্রামের বুকে কার্বন শোষণের প্রাকৃতিক কারখানা; চট্টগ্রাম শহরের ফুসফুস। আমরা মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবেশকর্মীরা অক্সিজেনের এ কারখানাকে ধ্বংস হতে দেব না।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে চট্টগ্রাম (পূর্ব) প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আহসান জাবির বলেন, হাসপাতাল নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সমাধিস্থল থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এসব সমাধি সংরক্ষণ করা হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে বিষয়টি আমার জানা নেই, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে সিআরবিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের সব আয়োজন প্রায় সম্পন্ন। ইউনাইটেড হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করেছে রেলওয়ে। চুক্তি অনুযায়ী রেলওয়ে সিআরবির ছয় একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সিআরবি সাত রাস্তার মাথা থেকে একটি সরু সড়ক চলে গেছে ২২ নম্বর এনায়েত বাজারের দিকে। এ সড়কটির নাম শহীদ নজির আহাম্মদ সড়ক। এ সড়ক দিয়ে সাত রাস্তার মোড় থেকে একটু নিচে নামতেই হাতের ডানে সমাহিত হয়ে আছেন শহীদ শেখ নজির আহাম্মদ। তার স্মৃতিফলকে লেখা রয়েছে- '১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন। তাদেরই একজন শহীদ শেখ নজির আহাম্মদ। ৫ এপ্রিল, একাত্তর সাল।' এ সমাধিস্থল ফেলে একটু সামনে এগোতেই ত্রিকোণ রাস্তার মোড়ে বর্ণক সংসদ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের তৈরি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভ ও ফলক চোখে পড়ে। সেই ফলকে স্মরণ করা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চাকসুর জিএস শহীদ আবদুর রব, ডবল এম এ মনোয়ার হোসেন, বিমল সিং, ফখরুল আলম, মো. সিরাজউদ্দিন, আলী নূর চৌধুরী, মহিউদ্দিন, নুরন্নবী চৌধুরী ও গঙ্গারামকে। এই স্মৃতিস্তম্ভ ফেলে আরও সামনে গিয়ে হাতের ডানে পড়বে শহীদ আবদুর রব কলোনি। সেই কলোনির পাশে রয়েছে রেলওয়ে জামে মসজিদ। মসজিদের পাশেই মহান মুক্তিযুদ্ধের সাহসী সেনাপতি চাকসুর জিএস শহীদ রবের সমাধি। তার ঠিক পাশেই মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন রফিকের কমান্ড অফিস কাঠের বাংলো। সাত রাস্তার মোড়ের জিপের পেছনে টেনে পাকিস্তানি বাহিনী তৎকালীন ওসি কোতোয়ালি খালেককে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় সিআরবি এলাকা। ইউনাইটেডকে হাসপাতাল করার জন্য রেলওয়ে সিআরবির যে ছয় একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে, সেই জায়গার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে।
এসব বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মুজাফফর আহমদ সমকালকে বলেন, সিআরবির যে জায়গাটি বেসরকারি হাসপাতাল করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, ৯ বছর আগে সেই জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ করার জন্য চট্টগ্রামের ডিসি প্রস্তাব দিলেও রেলওয়ে পরিবেশের ক্ষতি হবে বলে মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গাটি দেয়নি। এখন সেই জায়গা বেসরকারি হাসপাতাল করার জন্য বরাদ্দ দিয়েছে রেলওয়ে। আমাদের প্রশ্ন- স্মৃতিস্তম্ভ করলে পরিবেশের ক্ষতি হবে, হাসপাতাল করলে ক্ষতি হবে না? তিনি বলেন, সিআরবির এই জায়গায় শহীদ আবদুর রবসহ বেশ কয়েকজন শহীদের সমাধি রয়েছে। এখানে হাসপাতাল হলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সমাধিস্থলগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। শহীদ স্মৃতিবিজড়িত এ স্থানটিতে হাসপাতাল কেন, কোনো স্থাপনাই নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।
শহীদ আবদুর রবের ভাগিনা মো. মুক্তার বলেন, চাচার নামে রেলওয়ের একটি কলোনির নামকরণ করা হয়েছে। এখন হাসপাতাল করতে এসব তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চাচা ছাড়াও এখানে আরও অনেক শহীদের স্মৃতি রয়েছে। সরকারের কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো নিশ্চিহ্ন না করার জন্য শহীদ পরিবার থেকে আবেদন থাকল।
মুক্তিযোদ্ধা, পরিবেশবিদ ও কর্ণফুলী-গবেষক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, সিআরবি চট্টগ্রামের বুকে কার্বন শোষণের প্রাকৃতিক কারখানা; চট্টগ্রাম শহরের ফুসফুস। আমরা মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবেশকর্মীরা অক্সিজেনের এ কারখানাকে ধ্বংস হতে দেব না।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে চট্টগ্রাম (পূর্ব) প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আহসান জাবির বলেন, হাসপাতাল নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সমাধিস্থল থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এসব সমাধি সংরক্ষণ করা হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে বিষয়টি আমার জানা নেই, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।
মন্তব্য করুন