কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সহকারি সমিতির সদস্য ফারুক মিয়া হত্যার চার্জশিটভুক্ত ১০ আসামির মধ্যে আটজন আসামি জামিনে বেরিয়ে যাওয়ায় 'বিস্ময়' প্রকাশ করেছেন মামলার বাদি আছমা বেগম। সাম্প্রতিককালে আসামিরা কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফের দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাদিপক্ষ। আসামিদের জামিন স্থগিত করতে উচ্চ আদালতে প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

গত বছর ২০২০ সালের ২৬ মে কুমিল্লা দাউদকান্দির জামালকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ফারুক মিয়াকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে আহত করে। পরে দুই সপ্তাহ পর ১০ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফারুক (৩১)।

আহতের পর ফারুকের স্ত্রী আছমা বেগম বাদি হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে দাউদকান্দি মডেল থানায় প্রথমে জিডি করেছিলেন। পরে ফারুকের মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তরিত হয়। গত ১৮ মার্চ ১০ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে কঠোর লকডাউন থাকায় আদালতে বিচার কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে।

জামিনের বিষয়ে ফারুকের স্ত্রী আছমা বেগম বিস্ময় প্রকাশ করে সমকালকে বলেন, দশজন আসামির মধ্যে আটজনই জামিন পেয়ে বাড়িতে আছে। ওরা ভয়ংকর ও চিহ্নিত অপরাধী। 

তিনি দাবি করেন, আসামিরা তাকে এবং সাক্ষীদের নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। অন্য মানুষের মাধ্যমে আপোষ-মীমাংসার প্রস্তাব দিচ্ছে। প্রধান আসামি জনি ও অপর আসামি জাহাঙ্গীর জেলখানায় থাকলেও যে কোনো সময় বেরিয়ে যেতে পারেন বলে আশংকা করছেন তিনি। আসামিদের ভয়ে শ্বশুর বাড়িতে নিরাপত্তা না থাকায় দুই শিশু সন্তান নিয়ে গত এক বছর তার বাবার বাড়ি কানোরা গ্রামে থাকছেন বলে জানান আছমা বেগম।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, চাঞ্চল্যকর ফারুক হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি তারেক জুনায়েদ জনি ও দশ নম্বর আসামি জাহাঙ্গীর খান বর্তমানে কারাগারে আছেন।

রোববার কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জনির জামিন আবেদন শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদিপক্ষ। বাকি আট আসামি সায়মন রিয়াদ জয়, জিহানুল ইসলাম জিদান, জিলানী, জসিম হাসান, মশিউর রহমান বাশি, গরীবে নেওয়াজ, মো. শুভ ও দীন ইসলাম বিভিন্ন সময়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। সবাই এ মামলার এফআইআর ও চার্জশিটভুক্ত আসামি। এর মধ্যে জিলানী ও জসিম হাসান এক বছর এক মাস পলাতক থাকার পর গত ১৩ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। মাত্র একমাস কারাগারে থাকার পর তারা দু'জন গত ১৫ জুলাই কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান। তারা অন্য মামলারও আসামি বলে জানা গেছে।

মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী মো. সাদেক সমকালকে বলেন, ১৫ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যার পর তিনি জানতে পারেন দুই আসামি জিলানী ও জসিমকে জামিন দিয়েছেন আদালত। তবে দিনে ভার্চুয়াল কোর্ট চলাকালীন সময় পর্যন্ত তিনি জামিনের এমন কোনো আদেশ শোনেন নি বা জানেন না। আদালতের নির্ধারিত সময়ের পর কীভাবে জামিন আদেশ হলো-যা নজীরবিহীন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গত বছর ২ নভেম্বর আলোচিত এ হত্যা মামলার দুই আসামিকে জামিন আবেদন নাকচ করেন হাইকোর্ট। এরপর আসামিরা কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে একে একে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। একটি হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের অস্বাভাবিক জামিন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মামলার বাদি ফারুকের স্ত্রী আছমা বেগম।