ঢাকায় কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করার দাবিতে রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক। রোববার থেকে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা খোলার খবরে শনিবার সকাল থেকে রংপুর ও আশপাশের জেলা থেকে মডার্ন মোড়ে আসে শ্রমিকরা। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো যানবাহন না পেয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। এ সময় ঢাকা পৌঁছে দিতে যানবাহনের ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের কাছে তারা দাবি জানায়।

কুড়িগ্রাম থেকে সকাল ৯টায় রংপুরের মডার্ন মোড়ে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি কারখানায় কাজ করেন। তিনি জানান, রোববার সকাল ৮টায় কারখানা খুলবে। চালু হবে সব কার্যক্রম। এ কথা জানিয়ে সময়মতো উপস্থিত থাকার জন্য মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। আমিনুল বলেন, কারখানায় যেতে না পারলে চাকরি থাকবে না। কারখানা খোলার বিষয়ে হঠাৎ সরকারের সিদ্ধান্তে আমরা বিপাকে পড়ে গেছি। লকডাউনের কারণে সরকার দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ রেখেছে। আবার রপ্তানিমুখী কল-কারখানা খুলে দিয়েছে। তাই মডার্ন মোড়ে ভিড় করেছি গাড়ির অপেক্ষায়।

শনিবার সকাল থেকেই রংপুর নগরীর বাসস্ট্যান্ডসহ মডার্ন মোড়ে ভিড় জমায় ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষ। রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর থেকে আসতে থাকে তারা। এতে লোকারণ্য হয়ে পড়ে মডার্ন মোড়। ঢাকা যেতে গাড়ি না পেয়ে তারা মডার্ন মোড়ের রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এতে সেখানে কয়েক কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তাজহাট থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালে বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়ে। ঢাকা ফিরতে অবিলম্বে পরিবহন চালুর দাবিতে তারা বিক্ষোভ করে। পরে রংপুর মহানগর পুলিশ তাদের ঢাকায় পাঠাতে সহযোগিতার আশ্বাস দিলে মহাসড়ক ছাড়ে তারা। বেলা ৩টার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঢাকার উত্তরার একটি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবু কায়েস বলেন, ৫ আগস্ট পর্যন্ত সবকিছু বন্ধের ঘোষণা থাকায় বাড়িতে এসেছি ঈদ করতে। কিন্তু হঠাৎ ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী কারখানা ও প্রতিষ্ঠান চালুর সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছি। রংপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে ঘুরছি। কিন্তু ঢাকাগামী কোনো বাস পাচ্ছি না। চাকরি বাঁচাতে হলে যে করেই হোক রোববারে অফিসে যোগ দিতে হবে। কীভাবে যাব, বুঝে উঠতে পারছি না!

ঠাকুরগাঁওয়ের গার্মেন্ট কর্মী মনসুর পারভীন বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থা ঠিক রাখতে যেমন গার্মেন্ট খোলা দরকার, তেমনি কর্মীদের দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও সরকারের। কিন্তু আমরা এর কিছুই দেখছি না। পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছি।

রংপুরের গঙ্গাচড়ার গার্মেন্ট কর্মী আবু মোস্তফা বলেন, যদি গার্মেন্ট খোলারই পরিকল্পনা ছিল, তবে লকডাউনে বন্ধ দেওয়া হলো কেন? এখন আমাদের মতো বিপাকে পড়া মানুষদের পাশে কে দাঁড়াবে?

তাজহাট থানার ওসি আখতারুজ্জামান প্রধান বলেন, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে সহস্রাধিক মানুষ মডার্ন মোড়ে এসে ভিড় করেছিল। ঢাকাগামী বাস চলাচল না করায় তারা বিক্ষোভ করেছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করেছি।