নওয়াপাড়া রেলস্টেশনের পাশের বস্তির বাসিন্দা জবেদা বেগম। গত সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। গভীর রাতে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ওই সময় তার পরিবার নওয়াপাড়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল হাসানকে ফোন দিয়ে পরিস্থিতির কথা জানান। আধাঘণ্টার মধ্যে তার বাড়িতে পৌঁছে যায় অক্সিজেন সিলিন্ডার। তিনি এখন সুস্থতার পথে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত যশোরের অভয়নগর উপজেলা ও নওয়াপাড়া পৌর এলাকার অনেক রোগী এভাবেই পাশে পাচ্ছেন অধ্যক্ষ রবিউলের গড়ে তোলা অক্সিজেন ব্যাংক।

ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে অভয়নগরের গ্রামে গ্রামে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা শয্যা খালিই হচ্ছে না। চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। কারও কারও পরিস্থিতি হঠাৎ খারাপ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে বাড়িতে জরুরি অক্সিজেন সরবরাহ পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে দিশাহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে অধ্যক্ষ রবিউল নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে গড়ে তুলেছেন 'নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ অক্সিজেন ব্যাংক'। এই সেবায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও উপজেলার বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহযোগিতা পাচ্ছেন তিনি।

অধ্যক্ষ রবিউল বলেন, অভয়নগরে করোনা রোগী বাড়ছে জানতে পেরে বিবেকের দায় থেকে অক্সিজেন ব্যাংক করার উদ্যোগ নিই। নিজেরা দুটি সিলিন্ডার কিনে কাজ শুরু করি। পরে অভয়নগরের সন্তান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম মাসুদ আহমেদ ১০টি সিলিন্ডার দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। সহায়তা করেছে অভয়নগর কলেজ শিক্ষক সমিতি ও স্থানীয় সুধীজন। সব মিলিয়ে এখন ২০টি সিলিন্ডার নিয়ে অক্সিজেন ব্যাংকের কাজ চলছে। প্রাণের ঝুঁকি থাকলেও মানুষের উপকার করতে পারছি- এটাই আমার আনন্দ।

অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা ফোন পেলে ছুটে যাচ্ছেন রোগীর বাড়িতে। নিজেদের জীবন বিপন্ন করে দিনরাত যখনই তারা ফোন পাচ্ছেন, অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছেন বাড়িতে বাড়িতে। এ কাজে নিবেদিত চার শিক্ষক হলেন- নওয়াপাড়া সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবিএম নওয়াব আলী, মো. আক্তারুজ্জামান, আবিদ হাসান ও সাজেদুর রহমান সুমন। তাদের সঙ্গে আছেন কলেজের অফিস সহায়ক আবু সাঈদ। সহকারী অধ্যাপক আবিদ হাসান বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অক্সিজেন নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। যেভাবে চোখের সামনে মানবিক বিপর্যয় দেখছি, তাতে নিজেকে নিয়ে আর ভয় পাচ্ছি না।

অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহামুদুর রহমান রিজভী বলেন, করোনাকালে অধ্যক্ষ রবিউল হাসানের সেবামূলক কাজগুলো মানুষের উপকারে আসছে। বাড়িতে থাকা রোগীদের জন্য তাদের অক্সিজেন সেবা মহামারির এই দুঃসময়ে কাজে আসছে।

শুধু অক্সিজেন সহায়তা নয়, করোনা মহামারির শুরু থেকেই মানুষের পাশে আছেন অধ্যক্ষ রবিউল। গত বছর প্রথম লকডাউনে তার উদ্যোগে নওয়াপাড়া পৌরশহরের কয়েকশ ছিন্নমূল মানুষের জন্য রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

গত শনিবার কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর ধান কাটার মৌসুমে উত্তরাঞ্চল থেকে এসে লকডাউনে নওয়াপাড়ায় আটকে পড়েছিলেন ৮৪ শ্রমিক। স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে তাদের প্রায় এক সপ্তাহ কলেজে রাখা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন অধ্যক্ষ রবিউল। তা ছাড়া ওই বছর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসা দেশের বিভিন্ন এলাকার ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের একইভাবে তিনি কলেজে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং খুলনায় যাতায়াতেরও ব্যবস্থা করেছিলেন।