করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই দেশে নতুন উপদ্রব হিসেবে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। ইতোমধ্যে খুলনা বিভাগে রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ জন। এ অবস্থায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। তবে মাঠ পর্যায়ে এর বাস্তবায়ন হচ্ছে খুবই কম। সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম না চালালে খুলনায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্টরা।

খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ২ আগস্ট পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ জন। এর মধ্যে ২৩ জনই আক্রান্ত হয়েছেন যশোরে। আক্রান্তদের মধ্যে বর্তমানে ৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জানা গেছে, বর্তমানে সজীব শেখ নামের এক রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ৩২ বছর বয়সী সজীব বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ জেলার কচুবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, সজীব ঢাকায় চাকরি করেন। ঈদের সময় গ্রামে এসে জরে পড়েন। পরীক্ষা করে জানতে পারেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তিনি জানান, বর্তমানে হাসপাতালে দু’একজন ডেঙ্গু রোগী আসায় তাদের মেডিসিন ওয়ার্ডেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে রোগী বাড়লে পৃথক ওয়ার্ড করা হবে।

কেসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে জানা গেছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধমূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া ওয়ার্ড পর্যায়ের শ্রমিকের বাইরে ˆদনিক মজুরির ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়ে নর্দমা, নালা এবং জংলা পরিষ্কার এবং মশার ডিম বা লার্ভা নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া আগে ওয়ার্ড পর্যায়ে ছোট-বড় ড্রেনে লার্ভিসাইড (মশার লার্ভা নিধনের জন্য ওষুধ) স্প্রে করা হতো। এখন মানুষের বাসাবাড়ির ভেতরের ড্রেনেও লার্ভিসাইড দেওয়া এবং যে সব বাড়িতে ছাদ বাগান রয়েছে সেখানেও ওষুধ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কেসিসি। কয়েকটি এলাকায় পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও চলছে।

এ ব্যাপারে জনউদ্যোগ খুলনার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা সমকালকে বলেন, কেসিসির কোনো তৎপরতা আমার চোখে পড়েনি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং লার্ভা নিধনের কাজে অনেক পিছিয়ে রয়েছে কেসিসি।

তবে কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ সমকালকে বলেন, সারা বছর ধরেই মশক নিধনের কাজ চলছে। বৃষ্টির সময় মশার লার্ভা বা ডিম নিধনেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। লার্ভা অবস্থায় মশা মারলে সেগুলো আর বড় হতে পারে না। জুলাইতে বাইরের শ্রমিক নিয়ে ওয়ার্ডের ভেতরে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানো হয়েছে। এজন্য মশার প্রজনন মৌসুমেও মশা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি দাবি করেন, কেসিসির ব্যাপক তৎপরতার কারণে নগরীতে এখন মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি। লার্ভা নিধনের জন্য নতুন ওষুধ কেনা হয়েছে। সেই ওষুধ পরীক্ষার জন্য মশার লার্ভা খোঁজা হচ্ছে, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। নগরীর বাইরের খাল থেকে লার্ভা এনে ওষুধ পরীক্ষা করতে হচ্ছে।