করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যশোরের কেশবপুরে  কাজী (নিকাহ-রেজিষ্টার) ও জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় বাল্যবিয়ে বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

প্রশাসনের হস্তক্ষেপে যেসব বাল্য বিয়ে বন্ধের পর অভিভাবকদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হলেও পরে বিভিন্ন পন্থায় অধিকাংশ কিশোরীর বিয়ে হচ্ছেঅ।

সোমবারও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বরণডালী গ্রামে এক স্কুলছাত্রীর বাল্য বিয়ে বন্ধ হয়েছে। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ৭২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫২টি দাখিল মাদ্রাসা ও ১১টি কলেজ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ৩০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে, যাদের এক-তৃতীয়াংশ প্রায় ৯ হাজার ছাত্রী রয়েছে। 

শিক্ষা অফিস বলছে, করোনা সংক্রমণের মধ্যে শিক্ষকদের মনিটরিং না থাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে ম্যানেজ করে এদের অধিকাংশ ছাত্রীর বিয়ে দিয়েছেন অভিভাবকরা। প্রশাসনের নজরদারি এড়াতে গভীর রাতে এসব বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বিয়ে রেজিষ্ট্রেশনের ক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধের ও নানান অজুহাত তুলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নিকাহ-রেজিষ্টাররা। লোক জানাজানির ভয়ে পরে রেজিষ্ট্রেশন করার আশ্বাস দিয়ে কাজী ছাড়াও সাধারণ হুজুর দিয়ে এবং দূরে আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়েও অনেক বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।’     

উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরুর পর ৪ মাসে প্রায় অর্ধশত বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। কিশোরীদের অভিভাবকরা মুচলেকা দিয়েছেন। 

গত ২ আগষ্ট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইরুফা সুলতানা উপজেলার বরণডালী গ্রামের এক ব্যক্তির অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের  বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।  এর আগে গত ১৩ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন উপজেলার হাড়িয়াঘোপ গ্রামের এক ছাত্রীর বাল্য বিয়ে বন্ধ করে দেন। বরকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। 

গত ২৭ জুলাই বুড়লি গ্রামের বাল্যবিয়ে পড়ানোর সময় এক কাজীকে প্রশ্ন করায় মারপিট করা হয়েছে এক বৃদ্ধকে।

কেশবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং কানাইডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ সমকালকে বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যাপকহারে বাল্য বিয়ে বেড়েছে। এখন যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়, অনেক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে ছাত্রী পাওয়া যাবে না। আমার স্কুলের কয়েকজন ছাত্রীও বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। যেটা পরে জানতে পেরেছি।’ 

বিদ্যানন্দকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, ‘একেবারে বিয়েশাদি না হলে অনাচার বেড়ে যাবে, যে কারণে বাল্য বিয়ে বন্ধ হচ্ছে না। প্রশাসনের অধিক চাপাচাপির ক্ষেত্রে অধিক রাতে বিয়ে করে বউ রেখে বর ও বরযাত্রীরা চলে যাচ্ছে। লোক জানাজানির ভয়ে নতুন বউ নাকে নাকফুলও দিচ্ছে না। পরে দেখা যায় জামাই আসা-যাওয়া করে। বন্ধ করা বাল্য বিয়ের মেয়েকে মামু-খালুর বাড়িতে নিয়ে বিয়ে দিচ্ছে। এমন কি মেয়েকে ছেলের বাড়িতে নিয়েও বিয়ে হচ্ছে।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে বাল্য বিয়ের প্রবণতা কমে যাবে।’