সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ও সংশ্লিষ্ট কারও অনুমতি ছাড়াই টিকাদানের সত্যতা মিলেছে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকটোলজিস্ট (ইপিআই) মো. রবিউল হোসেনের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে বক্তব্য নেওয়ার পর চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেখানে অবৈধভাবে টিকা প্রদানের পাশাপাশি রবিউলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের সত্যতার কথা উল্লেখ করেন কমিটির সদস্যরা।

গত শুক্রবার সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ইউনিয়নের শোভনদণ্ডী আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং শনিবার শোভনদণ্ডী স্কুল অ্যান্ড কলেজে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই অনেককে টিকা দেন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট মো. রবিউল হোসেন।

এই ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ কনসালটেন্ট ডা. অজয় দাশকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নুরুল হায়দার ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান।

দুইদিন কমিটির সদস্যরা সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেইসঙ্গে অভিযুক্ত রবিউলসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে লিখিত ও মৌখিকভাবে নেন বক্তব্যও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িত সবার বক্তব্য ও যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত মেডিকেল টেকটোলজিস্ট (ইপিআই) মো. রবিউল হোসেনের বিরুদ্ধে নির্দেশনা অমান্য করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে টিকাদানের সত্যতা মিলেছে। এছাড়াও অতীতেও তার বিরুদ্ধে আসা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

তিনি বলেন, উপজেলার সব টিকা তার হেফাজতে থাকার কারণেই অনিয়মটি খুব সহজেই করতে পেরেছেন রবিউল। অবৈধভাবে দুই হাজারের বেশি মানুষকে টিকা প্রয়োগ করেছেন তিনি। প্রতিবেদনে নানা সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে।

কমিটির প্রধান ডা. অজয় দাশ জানান, প্রতিবেদন তৈরি করে তা বিভাগীয় স্যারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সেটি মহাপরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হবে। তবে প্রতিবেদন প্রসঙ্গে কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তিনি বলেন, 'প্রতিবেদনটি নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়েছে। এর বিস্তারিত বলতে পারবেন স্যার।'

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রসঙ্গে কথা বলতে চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, রবিউলের বিরুদ্ধে এটি নতুন অভিযোগ নয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা না নেওয়ায় আবারও অনিয়মে জড়িয়েছে সে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কারও অনুমতি না নিয়েই সেনোফার্মের ভ্যাকসিন অন্যত্র সরিয়ে দুইদিনে ইউনিয়ন পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশনবিহীন লোকদের টিকা প্রদান করে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) মো. রবিউল হোসেন রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন।