কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের দুটি শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত প্রায় ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা গত এক মাস ধরে খাদ্য সহায়তা নেওয়া বন্ধ রেখেছিলেন। তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত রোববার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায়। 

ওই সংঘর্ষের পর সোমবার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,  মঙ্গলবার থেকে রোহিঙ্গারা আবার খাদ্য সহায়তা নেওয়া শুরু করেছেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত টেকনাফ নয়াপাড়া নিবন্ধিত ত্রাণ কেন্দ্রে এসে খাদ্য সহায়তা নেয় ৩৫ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ।

টেকনাফ নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্প ইনচার্জ (উপসচিব) মো. আব্দুল মান্নান বলেন, মঙ্গলবার দুপুর থেকে রোহিঙ্গারা ত্রাণ নেওয়া শুরু করেছে। ত্রাণকেন্দ্রে লোকজন আসছে।

ত্রাণ নিতে আসা রোহিঙ্গা নারী মোমেনা আক্তার বলেন, ত্রাণের কার্ড নিয়ে যে সমস্য ছিল সেটি সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই আমরা ত্রাণ নিতে এসেছি। আর আশা করছি আমাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করবেন সংশ্নিষ্টরা।

এদিকে টেকনাফের নয়াপাড়া ও উখিয়ার কুতুপালংয়ের নিবন্ধিত শিবিরে ১৯৯২ সাল থেকে অবস্থানকারী ওই ৩৫ হাজার ৬৮০ জন রোহিঙ্গার প্রায় সবাই নতুন 'ফুড কার্ড' (খাদ্য সহায়তা কার্ড) বিতরণের বিরোধিতা করে সহায়তা না নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের দাবি, নতুন কার্ডগুলো ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে আসা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি করা কার্ডের মতোই। এর মাধ্যমে তিন দশক ধরে বসবাসরতদের মাত্র তিন বছর আগে আসা রোহিঙ্গাদের কাতারে ফেলা হয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সামছু-দৌজা নয়ন জানান, নকশা ও রং বদলে তাদের জন্য নতুন করে কার্ড তৈরির সিদ্ধান্ত হওয়ার পর খাবার নিতে রাজি হয়েছে তারা।

২০১৩ সাল থেকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) আওতায় রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য ডব্লিউএফপির কর্মকর্তারা নিবন্ধিতদের আলাদা তালিকা করেন। কিন্তু গত জুলাই মাসের শুরু থেকে পুরোনো রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার কার্ড ফেরত নেয় সংস্থাটি। এরপর ২০১৭ সালে আসা নতুন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পুরানোদের সংযুক্ত করে আবার কার্ড বিতরণ করা হয়। ওই কার্ড নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এক মাস ধরে খাদ্য সহায়তা নিচ্ছিল না পুরনো রোহিঙ্গারা।

সোমবার কার্ডের নকশা সংশোধন করার সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে ডব্লিউউএফপি কপবাজার কার্যালয়ের মুখপাত্র অ্যান্টোইন ভাল্লাস বলেন, যেসব শরণার্থী এখনও খাদ্য সহায়তা কার্ড সংগ্রহ করেনি তারা মঙ্গলবার থেকে পুরনো সহায়তা কার্ড ব্যবহার করে খাদ্য সংগ্রহ করতে শুরু করবে। আগামী দু'মাস তারা এই সুবিধা পাবেন এবং এর মধ্যেই সবাইকে নতুন কার্ড দেওয়া হবে।

বৈঠকে অতিরিক্ত আরআরআরসি সামছু-দৌজা নয়ন বলেন, নতুন কার্ডে তাদের সহায়তায় কোনো ধরণের পরিবর্তন আসেনি। কোনোভাবে কেউ তাদের ভুল বুঝিয়েছে বলেই তারা গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য খাবার বয়কট ও বিক্ষোভ করেছে। আসলে তাদের দাবি-দাওয়া শুধু ফুড কার্ড বিষয়ক নয়।

নয়াপাড়া নিবন্ধিত শিবিরে বসবাসকারী চার হাজার ২৯৭পরিবারের মধ্যে তিন হাজার ৬৯৭ পরিবারে ২০ হাজার ৭৩৫ জন এবং কুতুপালং নিবন্ধিত শিবিরের তিন হাজার ১২৬ পরিবারের মধ্যে দুই হাজার ৬১৪ পরিবারের ১৪ হাজার ৯৪৫ জন নিবন্ধিত শরণার্থী।