চট্টগ্রামের 'ফুসফুস' হিসেবে পরিচিত সিআরবি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে সিআরবি রক্ষা আন্দোলন। 

রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমানের মাধ্যমে চট্টগ্রামের পাঁচ নাগরিক ব্যক্তিত্ব স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। 

পাঁচ নাগরিক ব্যক্তিত্ব হলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও কবি আবুল মোমেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, কবি ও নাট্যব্যক্তিত্ব শিশির দত্ত, নাট্যব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার এবং স্থপতি ও নগরবিদ জেরিনা হোসেন। 

তাদের পক্ষে জেলা প্রশাসকের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফর আহমেদ, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন আজাদ, ডা. মো. মনজুরুল করিম বিপ্লব, ব্যবসায়ী খোকন বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট সুমন চক্রবর্তী।

সিআরবিকে চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহ্যগত, ভূ-পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ‘অহঙ্কারের জায়গা’ হিসেবে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২১০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এলাকাটিতে ছোট বড় পাহাড়-টিলা, উন্মুক্ত স্থান ছাড়াও রয়েছে ১৯৭ প্রজাতির উদ্ভিদ। যার মধ্যে আবার শতবর্ষী শিরিষ, গর্জন ও কড়ই গাছ রয়েছে। 

সিআরবিতে আরও আছে ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ৬ দফা, ১১ দফা দাবি আন্দোলনের সক্রিয় নেতা চাকসুর সাবেক জিএস, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আব্দুর রবসহ ৭ জন বীর সেনানীর সমাধি। 

সিআরবির শিরিষতলা নামক স্থানটি চট্টগ্রাম নগরবাসীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপনের একমাত্র স্থান, যেখানে প্রতিবছর সাংস্কৃতিককর্মী ও সাধারণ মানুষের মিলন মেলায় আয়োজিত হয় পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, রবীন্দ্র জয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠানসমূহ। 

জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ  চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ মুক্ত নিশ্বাস নিতে, শরীরচর্চা করতে নিয়মিত সিআরবি এলাকাতে আসেন। এ নগরীর বিপুল সংখ্যক শিশুরা সিআরবি এলাকাতে খেলাধুলা করে। এছাড়া এই এলাকাটি প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক আবেদনে সমৃদ্ধ। 

১৯৬১ সালের মহাপরিকল্পনা ও ১৯৯৫ সালের নগর পরিকল্পনায় সিআরবি ভবনকে ঐতিহাসিক ভবন হিসেবে সংরক্ষণ এবং সিআরবি ও বাটালী হিল এলাকাকে উন্মুক্ত পরিসর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে সিআরবিকে সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত সংরক্ষিত হিসেবে এলাকা হিসাবে গণ্য করা। 

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘এখানে হাসপাতাল নির্মাণ করা হলে এলাকাটির সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক আবেদনই শুধু ধবংস হবে না, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিসৌধকেও কলঙ্কিত ও গুরুত্বহীন করবে যা গ্রহণযোগ্য নয়।’

স্মারকলিপিতে চট্টগ্রাম নগরবাসীর প্রাণাধিক প্রিয়, ঐতিহ্যমণ্ডিত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আধার, ঐতিহাসিক সিআরবি এলাকাতে বৃহদায়ন প্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে বাণিজ্যিক আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষা করতে চট্টগ্রামবাসী প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

নাগরিক ব্যক্তিত্বরা স্মারকলিপিতে বলেছেন, ‘যৌক্তিক কারণে চট্টগ্রাম নগরীর সর্বস্তরের মানুষ সিআরবি এলাকায় মেডিকেল স্থাপনা প্রতিষ্ঠা এবং এ এলাকা বাণিজ্যিকীকরণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এ-সিদ্ধান্তের বিষয়ে ক্ষুব্ধ ও অপমানিত। চট্টগ্রাম নগরবাসী সিআরবিতে মেডিকেল স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে তাদের আপত্তি বিভিন্ন মাধ্যমে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জানিয়েছে। চট্টগ্রাম নগরবাসীর প্রাণের দাবি হলো সিআরবিকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে ও ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা এবং প্রস্তাবিত মেডিকেল স্থাপনাসমূহ চট্টগ্রাম নগরীর উপকণ্ঠে সরিয়ে  নেওয়া। চট্টগ্রামবাসী মেডিকেল স্থাপনার বিরুদ্ধে নয়, তবে তা সিআরবির বিনিময়ে নয়।'

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামবাসীর যৌক্তিক আবেদনে সাড়া না দিয়ে মেডিকেল স্থাপনা নির্মাণে সিআরবি এলাকাতে বেশ কয়েকটি গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ায় স্মারকলিপিতে উদ্বেগ  প্রকাশ করা হয়। 

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ সিআরবি এলাকাটিকে গোষ্ঠীস্বার্থের বিপরীতে জনস্বার্থে রক্ষা করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।