- সারাদেশ
- ক্যাম্পে স্বতঃস্ফূর্তভাবে টিকা নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা
ক্যাম্পে স্বতঃস্ফূর্তভাবে টিকা নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা

ক্যাম্পে টিকা নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গাদের টিকাদান শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে প্রত্যেক ক্যাম্পে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা কেন্দ্রে টিকা নিচ্ছেন ৫৫ বছরের ঊর্ধ্ব রোহিঙ্গা নারী-পুরুষরা। এর আগে সকালে স্ব স্ব ক্যাম্পের আরআরআরসি প্রতিনিধি ক্যাম্প ইনর্চাজরা টিকাদান উদ্বোধন করেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সামছু-দৌজা নয়ন জানান, প্রত্যেক ক্যাম্পে সকাল থেকে টিকাদান শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গাদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রথমদিনে ৭ হাজারের উপরে টিকাদান হতে পারে বলে ধারণা তার।
সরেজমিনে টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত ক্যাম্প, শালবন, জাদিমুরা ও লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১০টি কেন্দ্রে নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্য বিভাগসহ দাতা সংস্থার লোকজন সহায়তা দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে এপিবিএনের সদস্যরা কাজ করছে। এসব কেন্দ্রে প্রথম দিনে দেড় হাজারের বেশি রোহিঙ্গার টিকা নেওয়ার কথা রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চত করে ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি, টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ (সিআইসি) আব্দুল হান্নান বলেন, সকাল থেকে তার শিবিরে ৫৫ বছরের ঊর্ধ্ব নারী-পুরুষদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে তাদের একটি মেডিকেল টিম স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। প্রতিদিন সেখানে ১৬৭ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এ কার্যক্রম সাত কার্যদিবস চলবে।
নয়াপাড়া নিবন্ধিত শিবিরে টিকা নিয়ে কেন্দ্রের বাইরে কথা হয় ৭৫ বছরের আবুল বশরের সঙ্গে। তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত থেকে বাঁচতে আমাদের টিকার ব্যবস্থা করেছে। কেননা ক্যাম্পে ঘনবসতি হওয়ায় লোকজন সবাই ভয়ে ছিল। এখন অনেকটা ভয় দূর হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া টিকাদানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পের ৫৬টি কেন্দ্রে টিকাদান চলছে। প্রথম পর্যায়ে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গাদের টিকা দেওয়া হবে। এসব রোহিঙ্গাদের ‘ফ্যামিলি কাউন্টিং নাম্বার’ বা পরিবার পরিচিতি নম্বর রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে তাদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। আগের দিন তাদের ব্লকে টিকাদান কার্ড পৌঁছে দেন এনজিও কর্মীরা।
সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, জেলায় ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৯৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্য ১৯ হাজার ২৯৭ জনের জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে তার মধ্যে ২ হাজার ৬৫৪ জন শরণার্থী। এখন পর্যন্ত জেলায় ২০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য ২৯ জন রোহিঙ্গা ছিল।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গাদেরও টিকাদান শুরু হয়েছে। প্রত্যেক ক্যাম্পে ৫৫ বছরের ঊর্ধ্ব নারী-পুরুষদের টিকাদান চলছে। এ কার্যক্রমে সাড়ে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গা টিকার প্রথম ডোজ পাবে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু তোহা এম আর এইচ ভূঁইয়া জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে রোহিঙ্গাদের টিকাদান শুরু হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টিকাদান চলবে। শেষে বলা যাবে প্রথমদিনে কতজন রোহিঙ্গা টিকা নিয়েছেন। তবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে টিকাদানে সাড়া অব্যাহত রয়েছে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি ও টেকনাফের শালবন ও জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তা (সিআইসি) মোহাম্মদ খালিদ জানান, সকাল থেকে তার ক্যাম্পের তিনটি কেন্দ্রে রোহিঙ্গাদের টিকাদান চলছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট থেকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসে অন্তত ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে। যার মধ্যে কয়েক ধাফে ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন