সৈকতের নোনা জলে দাঁড়িয়ে ফের শোনা যাবে সমুদ্রের গর্জন। ইচ্ছে হলে ঢেউয়ের তালে গা ভাসানো যাবে। পড়ন্ত বিকেলে দেখা যাবে সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য। দীর্ঘ সাড়ে চার মাস পর অবশেষে ১৯ আগস্ট থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার। দেশের প্রধান এই পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার ঘোষণায় পর্যটন সংশ্নিষ্টরাও দেখছেন নতুন স্বপ্ন। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হলেও আগত অতিথি ও সংশ্নিষ্ট সবাইকে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। মানতে হবে অনেকগুলো শর্ত।

গত ১ মে থেকে টানা বন্ধ রয়েছে কক্সবাজারের পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র। দীর্ঘ সাড়ে চার মাসের বেশি সময় ধরে স্তব্ধ দেশের অন্যতম প্রধান এই বিনোদন কেন্দ্র। সমুদ্রসৈকতে সুনসান নীরবতা। বিপণি কেন্দ্রগুলো রয়েছে বন্ধ। নেই পর্যটকদের জন্য হাঁকডাক, নেই কোলাহল। পর্যটন সংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম। এ অবস্থায় সরকার ঘোষণা করেছে, ১৯ আগস্ট থেকে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হবে। সরকারের এই ঘোষণায় আশায় বুক বাঁধছেন কক্সবাজারে পর্যটন সংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ীরা। স্বপ্ন দেখছেন ফের ঘুরে দাঁড়ানোর।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হলেও হোটেল মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বিনোদন কেন্দ্রে আসনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ ব্যবহার করা যাবে। সৈকতে নামার ক্ষেত্রেও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। কোথাও ভিড় করা যাবে না। সভাসমাবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপনের শর্ত মেনেই ১৯ আগস্ট থেকে খুলে দেওয়া হবে পর্যটন কেন্দ্র। হোটেল মোটেল ও রিসোর্টে অর্ধেক আসন ভাড়া দেওয়া যাবে। রেস্টুরেন্টগুলোতেও অর্ধেক আসন শূন্য রাখতে হবে। মানতে হবে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি। তিনি বলেন, পর্যটক ও সংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ীদের কী কী শর্ত মানতে হবে, প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহে সংশ্নিষ্ট সবাইকে নিয়ে এ বিষয়ে একটি সভা আহ্বান করা হবে।

শুক্রবার সকালে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতে রয়েছে পুলিশ পাহারা। কাউকে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে সৈকতে এলেও হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। ১৯ আগস্টের আগে সৈকতে কাউকে নামতে দিচ্ছে না পুলিশ। কলাতলী হোটেল মোটেল জোনে দেখা যায়, প্রায় সব হোটেলে ধোয়ামোছার কাজ চলছে। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে হোটেল মোটেলগুলোকে সাজানো হচ্ছে নবরূপে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ কলিম জানান, কক্সবাজারে হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস-নির্ভর ২৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। আংশিকভাবে হলেও পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে সবার মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে।

কক্সবাজারের তারকা হোটেল সি গার্ল-এর প্রধান নির্বাহী ইমরুল ইসলাম সিদ্দিকী রুমী বলেন, করোনার কারণে গত বছর ছয় মাস বন্ধ ছিল হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট। এ বছরও প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার আগেই ফের লকডাউনে আমাদের ক্ষতি পাহাড় সমান। ক্ষতি পোষাতে না পেরে সব হোটেল মোটেলের কর্মচারীদের ছাঁটাই করতে হয়েছে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীদের অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন ইতোমধ্যে। পর্যটন খাতের জন্য এই ক্ষতিও কম নয়।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবুল কাসেম সিকদার বলেন, দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে ক্ষতি ব্যাপক। পাঁচ মাসে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সবাইকে কাজ করতে হবে। আমাদের বাঁচতে হবে। ফের ঘুরে দাঁড়াতে হবে।

ব্যবসায়ী নেতা মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুই লাখ লোক জড়িত। বার্মিজ মার্কেট, শুঁটকি মহাল, হোটেল মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহনসহ সংশ্নিষ্ট অন্যান্য খাতে জড়িত এসব লোকজন চরম কষ্টে দিনযাপন করছেন। পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে তারা আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ জানান, করোনায় লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বহু লোক কর্ম হারিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তাদের দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পনির্ভর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৪০ লাখ টাকা বিশেষ অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এই অনুদান বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত হলেও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।