সহনশীলতা বা সহমর্মিতার লেশমাত্র নেই; নেই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। কথা কাটাকাটির মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামবাসী। 

শুধু সংঘর্ষেই থেমে নেই বর্ষাপাড়া গ্রামবাসী। একইসঙ্গে চলে ভাংচুর, লুটপাট। এসব অভিযোগে কোটালীপাড়া থানা ও আদালতে ১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামি হয়েছেন শতাধিক মানুষ। গত এক বছরে ৫টি সংঘর্ষের ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ১০ জন। 

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বদিউজ্জামান বিশ্বাসের সঙ্গে মামুনুর রশীদ সিকদারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। 

এরই সূত্র ধরে চলতি বছরের মে মাসে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেই সংষর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় ১০জন গুরুতর আহত হয়। ভাংচুর করা হয় ৩০টি বসতঘর। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে কোটালীপাড়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

মামলা দায়েরের পর মামুনুর রশীদ সিকদারের ক’জন সমর্থকরা গ্রেপ্তার হলেও বাকিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। 

বদিউজ্জামান বিশ্বাস সমকালকে জানান, গত ১১ আগস্ট মামুনুর রশীদ সিকদারের লোকজন আদালত থেকে জামিনে এসে প্রতিপক্ষ মুনসুর আলী মোল্লা, নিজামুল হক মোল্লা, সরফত হোসেন মোল্লা, মোশারফ হোসেন মোল্লা, মহর শেখ,রাজা শেখ, নাজমুল শেখের বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। 

তিনি বলেন, ‘গত ১ বছরে পাঁচবার মামুনুর রশীদ সিকদারের লোকজন আমার ভাই-ব্রাদার ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। মেরে আহত করেছে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিকে। এ ঘটনাগুলোতে আমাদের পক্ষ থেকে কোটালীপাড়া থানা ও আদালতে ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় এরা জামিনে এসে গত বুধবার আমাদের লোকজনদের উপর ব্যাপক তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে।’

মুনসুর আলী মোল্লার স্ত্রী বিলকিস বেগম বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই মামুনের লোকজন আমাদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। হামলাকারীরা আমাদের জীবনযাপনের জন্য কিছুই রেখে যায়নি। এ ঘটনায় আমরা কোটালীপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’

 এ বিষয়ে মামুনুর রশীদ সিকদার বলেন, ‘বদিউজ্জামানের লোকজন আমাদের লোকজনের উপর বিভিন্ন সময়ে হামলা চালিয়েছে। তাদের এই হামলায় সেলিম গাজী, কালু গাজী, তোতা বিশ্বাসসহ প্রায় ১০ জন পঙ্গু হয়েছেন। এ ঘটনায় আমরা কোটালীপাড়া থানায় একটি ও আদালতে ৬টি মামলা দায়ের করেছি ‘

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি আইয়ুব আলী গাজী (৮৫) বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে আমাদের এলাকায় যেভাবে হামলা-মামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের  ঘটনা ঘটছে তা আমি পূর্বে কখনও দেখিনি। এলাকার মানুষদের মাঝ থেকে এখন  শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, সহনশীলতা-সহমর্মিতা উঠে গেছে।’ 

আরেক প্রবীণ ব্যক্তি সেকেন্দার বিশ্বাস (৮০) বলেন, ‘এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্রে করে প্রতিনিয়ত যেভাবে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা আর দেখতে চাই না। আমরা মরার আগে এলাকায় শান্তি দেখে যেতে চাই ‘

দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত তোতা বিশ্বাস (৭০) বলেন, ‘দুপক্ষের মারামারিতে আমি পঙ্গু হয়েছি। আমি চাই না আমার মতো এই গ্রামে আর কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করুক।’

ইউপি সদস্য লায়েকুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ‘এই দুই পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোটালীপাড়া উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। সালিশ বৈঠকের কিছুদিন যেতে না যেতেই এরা আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আমরা এই বিরোধের নিষ্পত্তি চাই। আমরা চাই এলাকার মানুষ সুখে শান্তিতে মিলেমিশে বসবাস করুক।’ 

কোটালীপাড়া থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গত মে মাসে আমি এই থানায় যোগদান করেছি। যোগদানের কয়েকদিন পরেই বর্ষাপাড়া গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষের একটি ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দুই পক্ষ কোটালীপাড়া থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন। গত বুধবার আবার দুই পক্ষের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ‘