দিনাজপুরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে ‘প্রেমের ফাঁদে ফেলে’ অর্থ আদায়ের অভিযোগে রংপুরে শাহীনা বেগম ওরফে শীলা আক্তার ওরফে ইসা (৩৩) ও মমিনকে (৩৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার বিকেলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে স্বামী-স্ত্রীর অর্থ আদায়ের ঘটনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান। 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, দিনাজপুরের বাসিন্দা সেই শিক্ষক আগস্টের প্রথম সপ্তাহে স্ত্রীর দাঁতের সমস্যা নিয়ে দিনাজপুরের একটি ডায়াগোনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানে দিনাজপুর খানসামা উপজেলার কাচনিয়া গ্রামের কাশেম আলীর মেয়ে শাহীনা বেগম ওরফে শীলা আক্তার ওরফে ইসার(৩৩) সঙ্গে পরিচয় হয় তার। শিলা তখন নিজেকে ‘সেবিকা’ বলে পরিচয় দেন। এরপর মোবাইলে ফোনে শীলার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হত শিক্ষকের। 

গত ১১ আগস্ট ওই শিক্ষককে পরিচিত চিকিৎসকের কাছে দেখানোর কথা বলে দিনাজপুর থেকে রংপুরে নিয়ে আসে শীলা। হোটেলে খাওয়া-দাওয়ার পর চিকিৎসক বসতে দেরি হয়ে অজুহাত দেখিয়ে রংপুর নগরীর কটকিপাড়ায় ভাবির বাসা রয়েছে বলে ওই শিক্ষককে নিয়ে যায়। 

এরপর বাড়িতে প্রবেশের ১৫ মিনিট পর পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রুমের দরজায় ধাক্কা দিয়ে শীলার স্বামী মমিনসহ আরও দুই যুবক প্রবেশ করে। সেখানে ওই শিক্ষককে শীলার পাশে বসিয়ে বেশকিছু ছবি তুলেন তারা। শীলা ওই শিক্ষকের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে, অন্যথায় ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তার ‘সম্মানহানি করবে’ বলে হুমকি দেয়। সেই সাথে বিষয়টি পুলিশকে অবগত করলে তাকে হত্যা করা হবেও বলে হুমকি দেয়া হয়। 

লোকলজ্জা ও ভয়ে ওই শিক্ষক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা শীলাকে পাঠান।

পরে ত ১৯ আগস্ট বিকেলে ওই শিক্ষক রংপুর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা কার্যালয়ে এসে অভিযোগ দেন। অভিযোগ পাওয়ার পর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে শুক্রবার রাত দেড়টায় নগরী কটকিপাড়া থেকে শীলা ও তার স্বামী মমিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান বলেন, শীলার স্বামী মমিন ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছেন। মমিনের আগের নাম তপন চক্রবর্তী এবং সে দিনাজপুর বোচাগঞ্জ সেতাবগঞ্জের মৃত গুরুচরণ চক্রবর্তীর ছেলে। শীলা বিভিন্ন সময় ছদ্মনাম ব্যবহার করে রংপুর নগরী, পাবর্তীপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সাথে কৌশলে প্রেম অথবা নানা সম্পর্ক তৈরি করে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। 

এ চক্রের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যহত রয়েছে বলে জানান ডিবি কর্মকর্তা। 

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার মত অনেকে এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন কিন্তু আইনের আশ্রয় নেননি। তাই অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে সাবধান থাকতে হবে। কেউ প্রতারিত হলে পুলিশকে বিষয়টি জানালে আমরা অভিযোগকারী পরিচয় গোপন রেখে প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ফারুক আহমেদ, এসআই আবু ছাইয়ুম তালুকদার, বাবুল ইসলামসহ অন্যরা।