- সারাদেশ
- পাঁচ বছর ধরে সড়কের পাশে তালবীজ রোপণ
খুলনায় কৃষকের উদ্যোগ
পাঁচ বছর ধরে সড়কের পাশে তালবীজ রোপণ

তালের চারা ও বীজ রোপণের আগে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে খুলনার রাঙেমারী গ্রামের কৃষকরা- সমকাল
সড়কের পাশে উঁকি দিচ্ছে সদ্য গজিয়ে ওঠা তালগাছ। কোথাও কোথাও কিছুটা বড় হয়েছে। আবার কোথাও হারিয়ে গেছে ঝোপঝাড়ের আড়ালে। খুলনার জিরো পয়েন্ট থেকে রূপসা সেতু বাইপাস সড়ক ধরে লবণচরা থানার দিকে যেতে ডান পাশে চোখে পড়ে এই দৃশ্য। শুধু এ সড়কই নয়, জয় বাংলার মোড় থেকে জিরো পয়েন্ট, চক্রখালী থেকে সাচিবুনিয়া বাজার, চরাগ্রাম, দরগাতলা ও রাঙেমারী গ্রামের সড়কের দুই পাশে দেখা যায় ছোট ছোট তালগাছ। গাছগুলো ছোট হওয়ায় পথচারীদের চোখ এড়িয়ে যায়। কিন্তু বীজ থেকে চারা গজানো দেখে উৎসাহ পান গ্রামের কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। কারণ, পাঁচ বছর ধরে সড়কের দুই পাশে তালের বীজ রোপণ করছেন তারা। এ সময়ে প্রায় ২০ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে মাত্র ১০-১৫ শতাংশ বীজ থেকে গাছ হয়েছে। বড় হলে এসব গাছই বজ্রপাত থেকে ও পরিবেশ রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত মনে করছেন গ্রামের কৃষকরা।
কৃষক ও কৃষি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তালবীজ রোপণে এগিয়ে আসেন বটিয়াঘাটা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কৃষক। ওই বছর উপজেলার চক্রাখালী থেকে সাচিবুনিয়া বাজার সড়কের দুই পাশে প্রায় দুই হাজার তালের বীজ লাগানো হয়। পরের বছর তালবীজ লাগানো হয় রূপসা উপজেলার চরাগ্রামে। সেই থেকে শুরু। প্রতি বছরই সড়কের দুই পাশে তালের চারা লাগিয়ে যাচ্ছেন উপজেলার জলমা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, কৃষি বিভাগ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমেই তালবীজ রোপণ করেছেন। চলতি বছরও প্রায় সাড়ে তিন হাজার তালের বীজ ও কিছু চারা রোপণ করা হয়েছে। এই কাজের নেপথ্যে থেকে কৃষকদের সংগঠিত ও উদ্বুদ্ধ করেছেন বটিয়াঘাটার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জীবনানন্দ রায়। কৃষি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ বছর বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পেয়েছেন তিনি।
প্রথম থেকেই তালবীজ লাগানো কাজের সঙ্গে রয়েছেন কৃষক মনি মোহন মণ্ডল। তিনি বলেন, গ্রামের কৃষকদের সারাবছরই কোনো না কোনো কাজ থাকে। এ জন্য বীজ লাগানোর পর অন্য এলাকায় গিয়ে চারা বা গাছের খোঁজ নেওয়া হয় না। কৃষি বিভাগ যদি দুই মাস পর শ্রমিক নিয়োগ করে যত্ন নিত, তাহলে গাছগুলো সহজে বড় হতো।
কৃষি অধিদপ্তরের আওতায় উপজেলার গ্রামগুলোতে কৃষকদের কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে সাচিবুনিয়া আবহাওয়া ক্লাব, ঝড়ভাঙ্গা ভার্মি ভিলেজ দল, রাজস্ব দল, জিকেবিএসবি কৃষক দল উল্লেখযোগ্য। এসব কৃষক সংগঠনের সদস্যরাই এই কাজে অংশ নেন।
জীবনানন্দ রায় জানান, যেসব তালবীজ লাগানো হয়েছে তার মধ্যে অর্ধেক গাছও যদি বড় হয়, তাহলেই গ্রামের জন্য যথেষ্ট।
মন্তব্য করুন