গৌরনদীতে এক গৃহবধূ স্বামীর সহায়তায় নিজের ছেলেকে ঢাকায় লুকিয়ে রেখে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে অপহরণ ও গুমের মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় হাজতবাসসহ নানা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে অবশেষে ঘটনার ৯ বছর পর লুকিয়ে রাখা সেই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রামের মরিয়ম বেগম নামে তার স্বামী জালাল মৃধার সহায়তায় নিজের সপ্তম শ্রেণি পড়ূয়া ছেলেকে ঢাকায় লুকিয়ে রাখেন। এরপর ২০১২ সালের ১৪ মে প্রতিপক্ষ এস রহমান মৃধা ও তার নাবালক দুই ছেলেসহ এলাকার ১৪ জনের বিরুদ্ধে বরিশালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অপহরণ ও গুমের মামলা করেন।

মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষ আসামিরা ওই বছরের ৩ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে তার ছেলে নলচিড়া শিববাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাসেল মৃধাকে মারধর করে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। ওই মামলার ১৪ জন আসামির মধ্যে ১২ জন ১০ বছর ধরে হাজতবাসসহ নানা হয়রানি-নির্যাতনের শিকার হন। একজন আত্মগোপনে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আসামিদের মধ্যে একজন পলাতকসহ বাকি সবাই জামিনে আছেন।

এস রহমান মৃধার স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, ‘মামলায় হাজতবাসসহ নানা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে তাদের পরিবার নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন ছেলের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এ অবস্থায় হয়রানি থেকে বাঁচতে তারা রাসেলের চাচাতো ভাইদের নগদ টাকা উৎকোচ দিয়ে জানতে পারেন রাসেল ঢাকায় রয়েছে।  রাসেল যাত্রাবাড়ী থানার উত্তর রায়েরবাগ এলাকার একটি অটোরিকশা গ্যারেজে কাজ করে। রাসেলকে সেখান থেকে আনতে তারা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলার সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই ফোরকান আহাম্মেদের সহযোগিতা চান। কিন্তু তিনি তাদের সহযোগিতা করেননি। পরে তারা নিজেরাই সেখানে গিয়ে রাসেলকে এনে মঙ্গলবার ভোরে গৌরনদী মডেল থানায় সোপর্দ করেন।’

অভিযোগ অস্বীকার করে সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই ফোরকান আহাম্মেদ বলেন, ‘তিনি দুই দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। এ অবস্থায় তিনি আসামিদের ফোনে সহযোগিতা করেছেন। উদ্ধারকারীরা খিলগাঁও থানার সহযোগিতা চান। তখন তিনি ওই থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) সঙ্গে কথা বলে রাসেলকে গৌরনদীতে আনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন।’

অপহরণ মামলার বাদী মরিয়ম বেগম বলেন, ‘তার ছেলেকে আসামিরাই নিয়ে গুম করে রেখে তারাই আবার বের করে এনেছে।’

রাসেল মৃধাকে উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন জানান, রাসেলকে থানা পুলিশের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বুধবার সকালে তাকে বরিশাল আদালতে সোপর্দ করা হবে।

গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, রাসেল একেক সময় একেক রকম তথ্য দিচ্ছে। তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছেন। বুধবার সকালে সঠিক তথ্য দেওয়া যাবে।