ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মালখানায় বিস্ফোরণে শফিকুল ইসলাম (২২) নামে একজন ওয়েল্ডিং মিস্ত্রী নিহত ও পুলিশ সদস্যসহ চার জন আহত হয়েছেন। নিহত শফিকুল সদর উপজেলার উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামের বশির উদ্দীন শেখের ছেলে। তিনি সাব কনট্রাক্টে মালখানায় লোহার র‌্যাক তৈরির কাজ করছিলেন। 

রোববার দুপুর দেড়টার দিকে ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারের পক্ষে শফিকুল ও তার সহকারী শ্রমিকরা লোহার র‌্যাক তৈরির সময় এই বিস্ফোরণ ঘটে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান ও পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলামসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মালখানায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও উদ্ধার কাজ করা দমকল বাহিনীর সদস্যরা ধারণা করছেন, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত কোনো ইলেক্ট্রিক ডিভাইসে এই বিস্ফোরণ হয়েছে। 

আহতরা হলেন- সদর উপজেলার আড়ুয়াকান্দি গ্রামের জামালের ছেলে শফিকুলের তিন সহকারী মোস্তাক হোসেন (২০), কাস্টসাগড়া গ্রামের মসলেম মোল্লার ছেলে আসাদ মোল্লা (৩০), ভগবাননগর গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে রাজিব (৩৫) ও মালখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনেস্টেবল অনুপম (২৩)। এর মধ্যে মোস্তাক ও রাজিবকে ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।  অনুপম প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।   

প্রতক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের সময় প্রচণ্ড শব্দে গোটা ভবন কেঁপে ওঠে। এ সময় আদালতের বিচারক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আতঙ্কিত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। অনেকে জানালার লোহার গ্রিল ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন। 

মালখানার দায়িত্বে নিয়োজিত এসআই ইমামুল জানান, দুপুরে মালখানার মধ্যে কাজ করছিল গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারের ৩/৪ জন শ্রমিক।  এ সময় মালখানার কাজে তদারকি করছিলেন কনেস্টেবল অনুপম । হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। সঙ্গে সঙ্গে ভবনে থাকা পুলিশ সদস্য, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবীসহ সাধারণ মানুষ ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেন। প্রথমে তিন জন ওয়েল্ডিং মিস্ত্রী ও পরে  বিস্ফোরণে  শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে  যাওয়া শফিকুলকে উদ্ধার করে দমকল বাহিনীর সদস্যরা। এদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পর শফিকুলের মৃত্যু হয়। মালখানার মধ্যে বিস্ফোরক কোনো দ্রব্য ছিল না।

ঝিনাইদহ দমকল বাহিনীর উপ-পরিচালক শামিম জানান, মালখানায় আসলে কিসের বিস্ফোরণ ঘটেছে তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। তবে ইলেক্ট্রনিক কোন ডিভাইসের বিস্ফোরণ হতে পারে। 

ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে বিস্ফোরণ হয়েছে। এ ঘটনায় ওয়েল্ডিং কারখানার মালিক শফিকুল নিহত ও তার তিন শ্রমিক আহত হয়েছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। 

এদিকে আহত পুলিশ সদস্য অনুপম তার ঊধর্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, ওয়েল্ডিং-এর কাজে ব্যবহৃত মেশিনে তিনি আগুন ধরতে দেখেছেন এবং তারপরই বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের সময় ওয়েল্ডিং মেশিনের পাশে শফিকুল বসে ছিলেন। 

অভিযোগ রয়েছে, ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মালখানা দীর্ঘদিন অরক্ষিত। মালপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এর আগে একবার মালখানায় চুরি হয়েছে। সেখানে মূল্যবান মামলার আলামত, বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া সোনা, টাকা, মাদক ও দেশি কামারশালার অস্ত্র থাকলেও ঠিকাদারের পক্ষে যারা কাজ করতে প্রবেশ করেছিল তাদের নাম ঠিকানা বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য মালখানার দায়িত্বরত এসআই ইমামুল গণমাধ্যমকে দিতে পারেননি। 

পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলামের কাছে চট্টগ্রামে জঙ্গিদের ফাঁসির আদেশের সঙ্গে এই ঘটনার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘এটি নিছক দুর্ঘটনা মাত্র।’