সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে স্ত্রী কর্তৃক তালাক পেয়ে ঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে শাশুড়ি ও স্ত্রীর আগের পক্ষের সন্তানকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত স্বামীর নাম সবুজ গাতিদার।

রোববার দুপুর ১টার দিকে সবুজকে সাতক্ষীরা জজ কোর্ট এলাকার আব্দুল মান্নানের হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে সবুজ কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের কাজলা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে আগুন দেয় বলে মামলার এজাহারে বলা হয়। আগুনে শাশুড়ি ফাতেমা খাতুন (৪৫) ও সৎ ছেলে ইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র নাজমুল (৮) দগ্ধ হয়। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। 

দগ্ধ ফাতেমার স্বামী আব্দুস সাত্তার সরদার জানান, তার মেয়ে নাজমা খাতুনের সঙ্গে সদর উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে আল আমিনের বিয়ে হয়েছিল। তবে সংসার টেকেনি। এই সংসারে নাজমার একটি ছেলে আছে। চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে নাজমার খালাতো ভাই দেবহাটা উপজেলার নাজিরেরঘের গ্রামের সবুজের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের এক সপ্তাহ পর নাজমাকে নিয়ে রাজবাড়িতে একটি কারখানায় কাজে লাগিয়ে দেয় সবুজ। পরে সেখানে নাজমাকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যাচেষ্টা করে। জীবন বাঁচাতে সে পালিয়ে বাড়ি আসে। আগস্টের শেষের দিকে নাজমা সবুজকে তালাক দেয়। পরে নলতার এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে সৌদি আরবে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে ভাষা শিক্ষার জন্য গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় যায় নাজমা। 

আব্দুস সাত্তার সরদার আরো বলেন, তিনি কাজলা গ্রামের আরিফ আহম্মেদের মাছের ঘেরে নৈশপ্রহরী হিসেবে কাজ করেন। প্রতিদিন কাজের ফাঁকে বাড়ি থেকে একবার করে ঘুরে যান তিনি। তালাক দেওয়ার পর দেবহাটা থানার অস্ত্র ও ডাকাতিসহ ছয় মামলার আসামি সবুজ আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে বাইরে থেকে শিকল টেনে জানালা দিয়ে পেট্রোল ছুঁড়ে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঘরে থাকা তার স্ত্রী ফাতেমা ও নাতি নাজমুল বের হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বের হতে পারেনি। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এবং পরে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের কর্তব্যরত  চিকিৎসক ডা. তৌফিক আহম্মেদ বলেন, ‘আগুনের নাজমুলের শরীরের ৯৫ শতাংশ ও ফাতেমার ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদেরকে বাঁচানো কঠিন।’

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, এ ঘটনায় আব্দুস সাত্তার সরদার বাদী হয়ে সবুজ গাতিদার, তার ভাই সুমন গাতিদার, তাদের বাবা নবাব আলী গাতিদার, মা মর্জিনা খাতুনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা তিনজনের বিরুদ্ধে শনিবার থানায় একটি মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি সবুজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।