গণমাধ্যমে মতামত দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রোষনলে পড়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দুইজন শিক্ষক। 

অশ্লীল স্লোগান ও শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সোমবার শিক্ষকদের হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। 

শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. এমদাদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শিক্ষক সমিতি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, কতিপয় বিপথগামী ছাত্র নামধারীরা ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্মানিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে স্লোগান, আপত্তিকর শব্দ প্রয়োগে গালাগাল ও হুমকি দিয়ে অসম্মান, অবমাননা করে ঔদ্ধত্য দেখিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তাদের দু'জনের মতামত ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের সূত্র ধরে তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-নামধারীদের এমন বিষোদগারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক বিব্রত, মর্মাহত ও অপমানিত।’ 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে হেয় প্রতিপন্নকারী এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতি নিন্দা জ্ঞাপন করছে। 

চবি শিক্ষক সমিতি বলেন, ‘শিক্ষক অবমাননাকারীদের এমন আচরণ মুক্তচিন্তা ও গণতন্ত্র চর্চার অন্তরায় এবং এ বিষয়ে দায়িত্বশীলদের নির্লিপ্ততা ও শৈথিল্য প্রদর্শন কখনও কাম্য নয়। কারণ এর পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে শিক্ষক সমিতি মনে করে।

এর আগে ‘ছাত্রী হেনস্তা থেকে চাঁদাবাজি সবকিছুতেই ছাত্রলীগ’ এই শিরোনামে ২৩ সেপ্টম্বর সমকালের করা প্রতিবেদনে মতামত দিয়েছিলেন  শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও আইনের শিক্ষক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন। 

এর পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাকে উদ্দেশ্য করে হুমকি দিয়ে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারীদের বিরুদ্ধে। 

এর আগে আরেকটি গণমাধ্যমে মতামত দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. মুহাম্মদ আবু তাহের। তার অপসারণ চেয়ে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে ছাত্রলীগ। 

চবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সমকালকে বলেন, ‘আমার অনুসারীরা না ছাত্রলীগের ছেলেরা স্লোগান দিয়েছে স্ট্যাটাস দিয়েছে।’ 

তবে তিনি শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। 

তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির কাজ কি? যখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা হল, তখন তারা কোনো কথা বলল না। তাদের নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম সমকালকে বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির কাছে ওই দুই শিক্ষক অভিযোগ দিয়েছে। পাশাপাশি আমরাও বিষয়টি খেয়াল করেছি। তাই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।’  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি যদি আমাদের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে তাহলে কারা মানববন্ধন করেছে, কারা মিছিল করেছে তা আমরা খতিয়ে দেখব।’