চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে বিশেষজ্ঞরা ফাটল না পেলেও বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে যাচাই-বাছাই করতে চায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বৃহস্পতিবার নগরের আন্দরকিল্লাহ সিটি করপোরেশনের পুরনো প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাধারণ সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

এই সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুইজন বিশেষজ্ঞ বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  এ কমিটিতে সিটি করপোরেশন ও সিডিএর কোনো প্রতিনিধি রাখা হবে না। 

প্রতিনিধি মনোনয়ন দিয়ে পাঠানোর জন্য প্রতিষ্ঠান দুইটির কাছে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এদিকে র‌্যাম্পটির নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ দল হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য র‌্যাম্পটি খুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সমকালকে বলেন, ‘বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ সংশয় তৈরি হয়েছে। তাই নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি যাচাই করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটির মতামতের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘চুয়েট ও সওজের দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। ইতিমধ্যে চুয়েট ও সওজকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা প্রতিনিধি মনোনয়ন দিয়ে পাঠাবেন।’

এদিকে গত বুধবার পরিদর্শনের পর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) প্রতিবেদন দিয়েছে র‌্যাম্পটির নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ডিপিএম) কনসালটেন্টস লিমিটেড। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, র‌্যাম্পের কলামে যেখানে ফাটল আছে বলা হচ্ছে, সেখানে স্ক্র্যাপার এবং স্টিল ব্রাশ দিয়ে ঘষে খালি চোখে দেখতে পাই এটি কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। পিয়ার, কলাম ও স্ট্রাকচার বক্স গার্ডারের মিলনস্থলে এর অবস্থান। দূর থেকে দেখলে এটিকে ফাটল মনে হয়। বাস্তবে এটি ফাটল নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, র‌্যাম্পটি হালকা যানবাহনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এ জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছিল, একটি উচ্চতারোধক বার লাগিয়ে লিখে দিতে হবে-‘এখানে ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ’। র‌্যাম্পের গোড়ায় উচ্চতারোধক বার পাওয়া যায়নি। উচ্চতারোধক বার স্থাপন করে হালকা যানবাহনের জন্য র‌্যাম্পটি খুলে দেয়া যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।

প্রতিবেদনে ছয়টি পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

ডিপিএম কনসালটেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, পরিচালক প্রকৌশলী শাহজাহান আলম ও সিনিয়র স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার সামী মো. রেজা প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন।

সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস সমকালকে বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদলের প্রতিবেদনের বিষয়টি চিঠি দিয়ে সিটি করপোরেশনকে জানানো হবে। তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নিবেন।’ 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চুয়েট ও সওজের প্রতিনিধি দলের যাচাই-বাছাইয়ের পর র‌্যাম্পটি খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 

উদ্বোধনের চারবছরে এম মান্নান ফ্লাইওভার কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র‌্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার প্রস্থ র‌্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। র‌্যাম্পটিতে ১৪টি পিলার রয়েছে। 

গত সোমবার র‌্যাম্পের একটি পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে- এমন ছবি ফেসবুকে ছড়ালে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুর্ঘটনা এড়াতে সোমবার রাত থেকে র‌্যাম্পটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। 

মঙ্গলবার সকালে পরিদর্শনে গিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং প্রধান প্রকৌশলীও বলেছেন, নির্মাণ ত্রæটির কারণেই ফাটল ধরেছে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন মেয়র।

তবে ফ্লাইওভারটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দাবি, এটি ফাটল নয়; পিলারের জোড়া।

বুধবার র‌্যাম্পটির নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদল পরীক্ষা করে জানান, খালি চোখে যেটা ফাটল মনে হচ্ছে, সেটি আসলে কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট।