মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় শাহ আমানত ফেরিডুবির ঘটনায় দ্বিতীয় দিনে ৫টি কার্ভাডভ্যানসহ দুই দিনে মোট ১০টি যানবাহন উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি কাভার্ড ভ্যান, ৩টি ট্রাক ও একটি মোরসাইকেল। 

শাহ আমানত রো-রো ফেরি ডুবে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে নৌ মন্ত্রণালয়ের গঠিত সাত সদস্যের তদন্তদল ও জেলা প্রশাসক গঠিত চার সদস্যের তদন্তদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনকালে তারা ঘটনাস্থলের আশপাশ ঘুরে দেখেন। তবে এ ব্যপারে মিডিয়ার সামনে তদন্ত কমিটির কোনো সদস্যই কথা বলতে রাজি হননি।

সরেজিমন দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ'র সদস্যরা পাটুরিয়ার ৫ নম্বর পল্টুনে উদ্ধার অভিযানে নামে। সাড়ে তিনঘণ্টা চেষ্টার পর ডুবে যাওয়া ফেরি থেকে একটি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার করা হয়। এরপর তারা দুর্ঘটনার দিন ফেরি থেকে ভেসে যাওয়া ৫ নং ঘাটের দেড়শ মিটার পূবে ডুবন্ত ৫টি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার করে। 

এর আগে দুর্ঘটনার দিন উদ্ধারকারীরা ৩টি ট্রাক ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। আর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় উদ্ধার কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৫টি কার্ভাডভ্যান উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার সহযোগিতায় এই কার্যক্রম চালানো হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়। মুন্সিগঞ্জ থেকে বুধবার রওনা দেওয়া উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় বৃহস্পতিবার রাত ৮টায়ও ঘাটে এসে পৌঁছায়নি।

বিআইডব্লিউটিএ'র যুগ্ম পরিচালক (উদ্ধার) ফজলুর রহমান জানান, ১৭টি কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে শাহ আমানত ফেরিটি পাটুরিয়ায় আসে। এসময় তিনটি ট্রাক ও কয়েকটি মোটরাসাইকেল তীরে উঠতে সক্ষম হলেও ১৪টি কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল ডুবে যায়।  দুর্ঘটনার পরপরই ৫টি কাভার্ডভ্যান ভেসে কিছুদূর গিয়ে ড্রেজারের পাইপের সঙ্গে আটকে যায়। দুইদিনে ৬টি কাভার্ডভ্যান, ৪টি ট্রাক ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া ফেরিতে এখনো ৪টি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান রয়েছে বলে ডুবুরিরা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পদ্মায় নিমজ্জিত একটি কার্ভাডভ্যান উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার সকালে আবারও উদ্ধার কাজ শুরু করা হবে। ফেরিতে থাকা ট্রাকগুলো উদ্ধার করা হয়ে গেলেই আমরা যানবাহন উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করব। আর ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধার করতে জাহাজ হামজা সক্ষম নয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের সহযোগিতায় ফেরিটিকে ওঠানো না গেলে বেসরকারিভাবে ভাড়াকৃত উদ্ধারকারী জাহাজ আনা হবে।

জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ জানান, উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য বুধবারই নারায়ণগঞ্জ থেকে রওনা হয়েছে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে সেটি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এই দুর্ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। স্বজন হারিয়েছে- এমন দাবিতেও কাউকে ঘাটে আসতে দেখা যায়নি।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ৪টায় পাটুরিয়া পাঁচ নম্বর ঘাটে ফেরির ডুবে যাওয়া স্থল পরিদর্শন করে নৌ মন্ত্রণালয়ের তদন্তদল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাত সদস্য নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুলতান আব্দুল হামিদ, বিআইডব্লিউটিএ'র পরিচালক রকিবুল ইসলাম তালুকদার,নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার অ্যান্ড এক্সামিনার ক্যাপ্টেন সাঈদ আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগ মানিকগঞ্জের উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম, বুয়েটের নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ড. জুবায়ের ইবনে আউয়াল, ফরিদপুর অঞ্চলের নৌপুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন ও বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম।

পরিদর্শন শেষে অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তারা বলেন, এ ব্যাপারে এখুনি কিছু বলা যাচ্ছে না। নৌ মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের সাত কর্মদিবস সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। আমরা যৌথভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের এসেছি। যেহেতু এখনো ফেরি উদ্ধার হয়নি। উদ্ধার হওয়ার পরে আবার আসতে হবে। আশা রাখি সাত কর্মদিবসের মধ্যে আমরা তদন্ত রিপোর্ট নৌ মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারবো।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের গঠতি তদন্তদলের প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সানোয়ারুল হক বৃহস্পতিবার বিকেলে চার সদস্য নিয়ে দুর্ঘটনাস্থল আসেন। এসময় তদন্তদলের সদস্যরা প্রত্যক্ষদর্শী ও ট্রাক চালকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, চার কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবেন তারা।

এদিকে দেশের অন্যতম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ২০টি ফেরির মধ্যে বেশিরভাগ ফেরিই দীর্ঘদিনের পুরনো ও মেয়াদোর্ত্তীণ। এদের মধ্যে কয়েকটি ফেরির বয়স ৪০ বছরেরও বেশি।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম জিল্লুর রহমান জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে চলাচলকারী ফেরির বয়স অনেক। তারপরও সেবা কার্যক্রম ঠিক রাখার জন্য জরাজীর্ণ এই ফেরি দিয়েই পারাপার হচ্ছে যানবাহন। ফেরির অবস্থা দেখে প্রধানমন্ত্রী হাতে একটি প্রকল্প নিয়েছেন। আমরা আগামী জানুয়ারির মধ্যে ১২টি ফেরি পেয়ে যাব।

দুর্ঘটনার শিকার ট্রাকের মালিক ও চালকরা বলেন, এসব ফেরি ঝালাই করা, ইঞ্জিন নষ্ট। ফেরি মেরামত ঠিকভাবে না করার জন্যই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে তার দায় কে নেবেন?