মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে নির্বাচনী সহিংসতায় আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি। বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। গ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। দুই ছেলেকে হারিয়ে কান্না থামছে না মা জাহেরা খাতুনের।

সোমবার সকালে ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই ইউপি সদস্যপ্রার্থী আজমাইন হোসেন টুটুল ও আতিয়ার রহমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে জাহারুল ইসলাম ও তার ভাই সাহারুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। টুটুলের চাচাতো ভাই ছিলেন তারা। ওই সংঘর্ষে টুটুল, দুই নারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। নিহত দু'জনের পরিবারের পক্ষ থেকে করা হত্যা মামলা গতকাল মঙ্গলবার গাংনী থানায় রেকর্ডভুক্ত হয়।

এদিকে সোমবারের সকালের ওই ঘটনার পর সন্ধ্যায় গাংনী উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী আতিয়ার রহমানের বাড়ি থেকে বিপুলসংখ্যক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এর মধ্যে রয়েছে ৫টি বল্লম, ৪টি রামদা, ৭টি হাঁসুয়া, ৩টি দা, ৩টি টেঁটা, ১টি শাবলসহ নানা ধরনের ধারাল অস্ত্র ও লাঠিসোটা। আটক করা হয়েছে লালন হোসেন, হত্যার ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি আতিয়ারের ভাই মহাব্বত আলী, লাভলু হক, হিসাব উদ্দীন, আক্তার হোসেন, আক্তারুল ইসলাম, সুমন হোসেন, কিরণ হোসেন, চন্দন আলী ও রিদওয়ান হোসেনকে।

মঙ্গলবার লক্ষ্মীনারায়ণপুরে গিয়ে দেখা যায়, দুই ছেলে জাহারুল ও সাহারুলকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তাদের মা জাহেরা খাতুন। তার কান্না থামছেই না। বিলাপ করতে করতে বেহুঁশ হয়ে পড়ছেন তিনি। সম্বিত ফিরে পেয়ে জাহেরা খাতুন বলেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের বারবার হত্যা করছে আতিয়ার বাহিনী। ২০০৯ ও ১৭ সালে জাহারুল ও সাহারুলের দুই চাচাতো ভাইকে হত্যা করে তারা। ওই দুই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় এখনও বিচার পাননি। এবার আতিয়ার রহমান বর্তমান ইউপি সদস্য ও আসন্ন নির্বাচনে সদস্য প্রার্থী আজমাইন হোসেন টুটুলকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিল। সোমবার সকালে টুটুলকে রামদা দিয়ে কোপাচ্ছিল আতিয়ার ও তার লোকজন। এ খবর পেয়ে জাহারুল ও সাহারুল তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়। এ সময় টুটুলকে ছেড়ে আমার দুই ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে তারা।

জাহেরা খাতুন বলেন, আমার ছয় মেয়ে, দুই ছেলে। ছেলে দু'জনই খুন হয়ে গেল। এখন কী নিয়ে বাঁচব আমরা?

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু আনসার জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেহেরপুরের পুলিশ সুপার রাফিউল আলম বলেন, নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লক্ষ্মীনারায়ণপুরের হত্যাকাণ্ডে যারাই অভিযুক্ত হবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।