- সারাদেশ
- মোংলা বন্দরে ডুবে গেছে কয়লাবোঝাই বাল্কহেড, নিখোঁজ ৩
মোংলা বন্দরে ডুবে গেছে কয়লাবোঝাই বাল্কহেড, নিখোঁজ ৩

ফাইল ছবি
বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকায় জাহাজের ধাক্কায় এমবি ফারদিন নামে কয়লাবোঝাই একটি বাল্কহেড ডুবে গেছে।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় বাল্কহেডডুবির ঘটনায় তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
জানা গেছে, বন্দরের হারবাড়িয়া ৯ নাম্বারে অবস্থানরত বিদেশি জাহাজ এমভি এলিনা বি থেকে কয়লাবোঝাই করে ঢাকা মিরপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায় এমবি ফারদিন ১ বাল্কহেডটি। ওই সময় বিপরীত দিক থেকে বন্দর ত্যাগ করার সময় বিদেশি জাহাজ এমভি হ্যান্ডপার্ক নামক জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগে কয়লাবোঝাই বাল্কহেডটির। এর পর আস্তে আস্তে পানি ঢুকে বাল্কহেডটির পেছনের অংশ ডুবে যায়। এসময় এমভি এলিনা বি জাহাজের কয়লা খালাসকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স টি হক-এর লঞ্চ এসে লাইটারের দুই কর্মচারী ও এক আনসারকে উদ্ধার করে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে বাল্কহেডের তিন কর্মচারী।
মেসার্স টি হক কোম্পানির সুপারভাইজর মো. লোকমান হোসেন জানান, দুর্ঘটনার পর তিনি বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও বন্দরের সংশ্লিষ্ট শাখাকে জানিয়েছেন। তবে রাত ১২টার মধ্যে কারও সহযোগিতা না পাওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সুপারভাইজার লোকমান হোসেনের দাবি, ডুবে যাওয়া বাল্কহেডটিতে ৫০০ থেকে ৬০০ মেট্রিক টন কয়লা থাকতে পারে। রাত ১২টার সময়েও বাল্কহেডটির কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল।
মোংলা কোস্টগার্ডের পশ্চিম জোনের মিডিয়া উইংয়ের অফিসার মো. আবু সুমা জানান, নিখোঁজদের উদ্ধারে কোস্টগার্ডের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিখোঁজ তিন জনের মধ্যে রয়েছেন বাল্কহেডের (সুকানি) মো. মহিউদ্দিন, (গ্রিজার) নূর আলম ও (স্টাফ) মো. রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন,‘ডুবে যাওয়া বাল্কহেডটিতে মোট পাঁচ জন কর্মী ছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে দুই জন সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।’
কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিনিধি মো. আশিকুর রহমান জানান, বন্দরের হাড়বাড়িয়া এলাকার ৯ নম্বর এ্যাংকরে অবস্থানরত বিদেশি জাহাজ এমভি এলিনাবি থেকে সোমবার রাতে ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ মেট্রিক টন কয়লাবোঝাই করে বলগেট এমভি ফারদিন। কয়লা বোঝাই শেষে ওই বিদেশি জাহাজ ছেড়ে প্রায় ৭০০ গজ দূরে যেতেই সোমবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে সেলিং হওয়া অপর একটি বিদেশি জাহাজের সাথে বোঝাই বলগেটটির ধাক্কা লাগে। ওই সময়ে বলগেটটি ব্যাক গিয়ারে থাকার কারণেই মূলত বিদেশি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা খায়।
আশিকুর রহমান জানান, বলগেটটির কয়লা নিয়ে ঢাকার মিরপুরের গাবতলীতে যাওয়ার কথা ছিল।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার কমান্ডার শেখ ফখরউদ্দিন বলেন, ‘জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে যে বলগেটটি ডুবেছে সেটি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে পণ্য পরিবহণ করছিল। কারণ এক হ্যাজবিশিষ্ট বলগেট ডিজি শিপিং থেকে নিষিদ্ধ। এ বলগেট বালু ছাড়া অন্য কোন পণ্য পরিবহণ করতে পারবেনা। এটির (বলগেট) বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’
তিনি আরও বলেন, বলগেটটির চলাচলে নিজস্ব কোনো যোগাযোগ (যান্ত্রিক বার্তা আদান-প্রদান) ব্যবস্থা নেই। ফলে বলগেটটির চালক জানতেন না যে ওই সময়ে মার্চেন্ট শিপ মুভমেন্ট হচ্ছিল, তাই দুইটি বিদেশি জাহাজ সেলিং হয়ে যাওয়ার সময় একটির পিছনের অংশে ধাক্কা খেয়ে সেটি ডুবে যায়।’
তিনি জানান, বলগেটটি মূল চ্যানেলের বাইরে পূর্ব দিকে ডুবেছে, এতে জাহাজ চলাচলে কোন সমস্যা হবে না।
মোংলা থানার ডিউটি অফিসার এসআই মিকাইল জানান, বাল্কহেডডুবির ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
এদিকে বালু পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত বাল্কহেডটিতে কয়লা বোঝাইয়ের অভিযোগ উঠেছে ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
কয়লা নিয়ে ডুবে যাওয়া বাল্কহেড এম ভি ফারদিন-১ এর চার্টার মালিক মোঃ মানিক বলেন, ‘বাল্কহেড জেনে শুনেই ইষ্টার্ন ক্যারিয়ার এটি ভাড়া নেয়। এই বাল্কহেডে আমরা বালু পরিবহন করে থাকি, কিন্তু ওই ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠান আমাদের কয়লা পরিবহনে বাধ্য করেছে।’
ইষ্টার্ন ক্যারিয়ারের ব্যবস্থাপক মো.কুদ্দুস বলেন, ‘এটি যে বালু পরিবহনের বাল্কহেড ছিল সেটি আমাদের জানা ছিল না।’
নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের পরিচালক (ঢাকা) মো. বদরুল হাসান বলেন, ‘পণ্য পরিবহনের জন্য বিভিন্ন নৌযানের সার্ভে এবং রেজিষ্ট্রেশন প্রদান করা হয়। বালু টানার বোটে আমদানি করা কোনও পণ্য পরিবহনের নিয়ম এবং আইন নাই।’
এর আগে গত ৮ অক্টোবর সার নিয়ে বন্দরের পশুর নদীতে ও ৯ অক্টোবর পাথর নিয়ে ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় দুইটি কার্গো জাহাজডুবি হয়েছিল। সার নিয়ে ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব হলেও পাথর নিয়ে ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকার ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজটিকে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
বন্দর সূত্র জানায়, বন্দরের মূল চ্যানেলে কোনো নৌযান না থাকলেও এর খুব কাছেই কয়লা নিয়ে ডুবে যাওয়া বাল্ক হেডসহ মোট ৫টি নৌযান এখনও ডুবন্ত অবস্থায় রয়েছে।
মন্তব্য করুন