তিন দিন আগে 'আত্মহত্যা' করেছে নেশাগ্রস্ত ছেলে। পুলিশের ঝামেলা এড়াতে ছেলের লাশ সেপটিক ট্যাংকে বস্তা চাপা দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা-মা।

শুক্রবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের নরিনা পূর্বপাড়া গ্রাম থেকে আব্দুল করিম নামের ১৮ বছর বয়সী ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

করিম ওই গ্রামের আলহাজ শেখ ছেলে। তার মা নাজমা খাতুন ইউপি নির্বাচনে নরিনা ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী প্রার্থী।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা আলহাজ শেখ, মা নাজমা খাতুনকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে আসে। বড় ভাই নাসির, দাদী সাবেক ইউপি সদস্য আলেয়া বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে তার শোবার ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করে করিম। পরে করিমের বাবা মা পুলিশের ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য সেপটিক ট্যাংকে বালুর বস্তা দিয়ে লাশ চাপা দেয়। করিম দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবন করত বলেও জানায় তারা। 

করিমের বাবা বলেন, দুই বছর আগে তাদের এক পুত্রবধূ চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করে। সে সময় তাদের অনেক ভোগান্তি ও অর্থনাশ হয়েছিল। তাই এবার ঝামেলা এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন তারা। তবে মনের কষ্ট সইতে না পেরে শেষে বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। 

আর বিষয়টি যেন কেউ বুঝতে না পারে, সেজন্যই স্বাভাবিকভাবে স্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে দাবি করেন হোসেন।

তিনি বলেন, ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি সহ্য করা তাদের জন্য ‘কঠিন হয়ে পড়েছিল’। তাই শুক্রবার সকালে স্থানীয় গাড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের কাছে তারা ঘটনা প্রকাশ করেন। এরপর চেয়ারম্যান পুলিশকে খবর দেয়।

নাজমা খাতুন বলেন, তার মেজ ছেলে করিম দীর্ঘদিন ধরে ‘নেশায় আসক্ত’। মঙ্গলবার রাতে খাওয়ার পর নিজের ঘরে ঘুমাতে গিয়েছিল সে। পরদিন ভোরে ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে ছোট ছেলের ঘর থেকে উঁকি দিয়ে করিমের মৃতদেহ ‘ঝুলতে দেখেন’ তারা। পরে স্বামী-স্ত্রী মিলে লাশ নামিয়ে বাড়ির ল্যাট্রিনের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে মাটিচাপা দেন।

খবর পেয়ে শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল হোসেন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিদ মাহমুদ খান ও পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল মজিদ দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিদ মাহমুদ খান জানান, করিমের লাশ উদ্ধারের পর থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। শনিবার ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।