লক্ষ্মীপুর সদরের উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন এমরান হোসেন নান্নু। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধান সন্তানের মিথ্যা পরিচয় দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে নান্নু দলবল নিয়ে সদর উপজেলা পরিষদে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। নান্নু ওই ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান পরিচয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় লোকজন ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আগামী ২৩ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বশীল নেতারা সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা করে কেন্দ্রে জমা দেন। রহস্যজনক কারণে দত্তপাড়া, ভবানীগঞ্জ ও উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের নাম ওই তালিকায় দেওয়া হয়নি। তারা আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা কমিটির দায়িত্বশীল নেতা।

এদিকে মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন দত্তপাড়ার আহসানুল কবির রিপন ও ভবানীগঞ্জের সাইফুল হাসান রনি।

মনোনয়ন বোর্ডে কাছে পাঠানো উত্তর হামছাদীর সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা সূত্রে জানা যায়, সেখানে প্রথমে এমরান হোসেনের নামের নিচে (বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তন) লেখা। পদবির ছকে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি উল্লেখ করা। ওই তালিকায় ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সলিমুল্লাহ পাটওয়ারী ও জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. নজরুল ইসলানের নামও রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রার্থী সলিমুল্লাহ পাটওয়ারী বলেন, ‘সদর উপজেলা ও ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা আমাদের হাতে আছে। এমরান হোসেনের প্রয়াত বাবা আবদুর রশিদের নাম কোনো তালিকায় নেই। অতীতেও ছিলেন না। এটা পুরোপুরি প্রতারণা।’

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির বাবুল মোল্লাহ বলেন, ‘এমরান হোসেনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা তো দূরের কথা, তিনি সহযোগীও ছিলেন না। তাকে নৌকা পাইয়ে দিতে মিথ্যা তথ্য লিখে প্রতারণা করা হয়েছে।’

কেন্দ্রে পাঠানো তালিকায় তার নিজের সই আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুল মোল্লাহ বলেন, ‘আমার কাছ থেকে তালিকা করার আগেই সই নিয়েছিলেন জেলার নেতারা। কার নাম, কিভাবে দিয়ে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দিয়েছে তা আমি দেখিনি।’

ইউনিয়নের পশ্চিম হাসন্দি গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম সংগঠক রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি। এমরান হোসেনের বাবা কখনও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। যুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট কোনো কাজেও তিনি সহায়তা করেননি। সরাসরি এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত জেলা নেতাদেরও নিয়মানুয়ী বিচার হওয়া উচিত।’

এ ব্যাপারে এমরান হোসেন নান্নু দাবি করেন, তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একটা মহলে এখন তা নিয়ে অপপ্রচার করছেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, তালিকায় প্রার্থীর নাম-পদবি লেখা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তন লেখা হয়নি।