
তামান্না আক্তার কণা
যৌতুকের টাকা দিতে দেরি হওয়ায় এক কলেজছাত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তামান্না আক্তার কণা (২০) নামের ওই ছাত্রীকে তার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে।
সোমবার কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার আলোকদিয়া ভূঁইয়াবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে লাকসামের নশরতপুরে তার নানাবাড়ির লোকজনের কাছে হস্তান্তর করে। তিনি লাকসামের চলন কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
কয়েক বছর আগে কণার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে তারা মা ও ভাইবোন মিলে নানাবাড়িতে থাকতেন। বিয়ের পরও নানাবাড়ি থেকে পড়াশোনা অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি। গতকাল কণাকে হত্যার পর মামলা করতে গেলে প্রথমে পুলিশ মামলা নিতে চায়নি বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে।
নিহতের ভাই সজীব আহমেদ বিপ্লব বলেন, ছয় মাস আগে মনোহরগঞ্জের নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের আলোকদিয়া ভূঁইয়াবাড়ির অহিদুল ইসলামের ছেলে রাজমিস্ত্রি রাশেদুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে তার বোনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই বিদেশে যাওয়ার জন্য দুই লাখ টাকা যৌতুক চেয়ে আসছিল তার বোনজামাই টিটু। সেই টাকার জন্য কণার শ্বশুর-শাশুড়িসহ ওই বাড়ির লোকেরা প্রায়ই তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাত। একপর্যায়ে ধারদেনা করে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা কণা এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান শেষে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে বলে টিটুকে জানানো হয়।
রোববার বিকেলে ২০ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে পেটাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপরই কণার স্বামী টিটু, শ্বশুর অহিদুল ইসলাম ও শাশুড়ি রোকেয়া বেগম গা-ঢাকা দেন।
সজীব আরও বলেন, তার বোন রোববার এইচএসসি পরীক্ষার বিদায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্থানীয় চলন কলেজে যায়। স্বামীর বাড়ি যাওয়ার জন্য যৌতুকের ২০ হাজার টাকা সঙ্গে নেয়। কিন্তু তার জীবন বাঁচাতে এই টাকা যথেষ্ট ছিল না। নিহতের মা আয়মা বলেন, 'রোববার রাতে টিটু আমাকে ফোন করে বলে, কণার শরীরটা ভালো না, তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়িতে আসেন। গিয়ে দেখি, কণার নিথর দেহ পড়ে আছে।'
আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
মনোহরগঞ্জ থানার ওসি মাহাবুল কবির বলেন, নিহত কলেজছাত্রী কণার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতের ভাই সজীব বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ঘাতকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন