বেশ ধুমধাম করেই পরিবারের সম্মতিতে দুই প্রতিবন্ধীর বিয়ে হলো বগুড়ার শেরপুর উপজেলায়। তাদের বিয়ে উৎসবে অংশ নেন স্থানীয় ইউএনওসহ নানা শ্রেণি-পেশার তিন শতাধিক মানুষ। আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে শেরপুর সার্বিক উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত কাদের সুফিয়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়।

বরের সাজে মাথায় টুপি পরে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মনিরুজ্জামান (২৫) শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে পৌর শহরের ঘোষপাড়ার ওই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত বিয়ের অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছেন। সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী সংবর্ধনা মঞ্চে মাথায় টিকলি পরে কনের সাজে আগেই বসেছিলেন রহিমা খাতুন (২২)। বরকে সাদরে গ্রহণ শেষে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। পরে দুই প্রতিবন্ধী বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়েতে দেনমোহর ধার্য করা হয় সত্তর হাজার টাকা। সন্ধ্যায় কনেকে সঙ্গে নিয়ে বর তার নিজ বাড়িতে ফিরে যান।

বর মনিরুজ্জামানের বাড়ি বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার নগরহাট গ্রামে। জন্ম থেকেই তিনি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তিনি স্থানীয় মহিপুর দুগ্ধ ও প্রাণী উন্নয়ন খামারে চাকরি করেন। কনে রহিমা শেরপুর পৌর শহরের গোসাইপাড়া এলাকার শাহজাহান আলীর মেয়ে। পাশেই অবস্থিত প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি দর্জির কাজও শিখেছেন। তিনিও জন্ম থেকেই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী।

অন্যান্য বিয়ের মতো সাক্ষীদের উপস্থিতিতেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। বর ও কনে মাথা ঝুঁকিয়ে বিয়েতে সম্মতি দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই বর-কনেকে দোয়া-আশীর্বাদ করেন। বিবাহত্তোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইউএনও ময়নুল ইসলাম, শেরপুর পৌরসভার মেয়র জানে আলম খোকা, শেরপুর সার্বিক উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু, কাদের সুফিয়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উম্মে সুফিয়া বিউটি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু জানান, বরযাত্রী ও অতিথিদের আপ্যায়নসহ এই বিয়ের সব খরচ তার সংগঠনের পক্ষ থেকেই বহন করা হয়। এ ছাড়া ওই দম্পতির নতুন সংসারের যাবতীয় আসবাবপত্র দেওয়া হয়েছে। কাদের সুফিয়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উম্মে সুফিয়া বিউটি বিয়ে অনুষ্ঠানে সত্তর হাজার টাকা খরচ করেন। এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পেরে গর্ববোধ করেন তিনি।

ইউএনও ময়নুল বলেন, প্রতিবন্ধীদের সমাজে বোঝা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু আসলে তারা বোঝা নয়। তাদের ঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারলে তারাও আমাদের সম্পদ। আজকের এই আয়োজন আরেকটি অনুপ্রেরণা।