রাজধানীতে গত রোববার সকাল থেকেই ছিল বৃষ্টি। কখনও ভারি কখনও হালকা। মেঘ-বৃষ্টিতে সূর্যের দেখা মেলেনি। সোমবার তারই পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখলেন নগরবাসী। প্রবল বৃষ্টিতে অনেক স্থানে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। ফলে পথ চলতে গিয়ে নগরবাসীকে পড়তে হয় সীমাহীন ভোগান্তিতে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি হয় আরও ৫৪ মিলিমিটার। ১২ ঘণ্টায় রেকর্ড ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও সে তুলনায় রাজধানীতে জলাবদ্ধতা হয়েছে কম। তবে দিনভর টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তি ছিল চরমে।

এ দিন খুব প্রয়োজন ছাড়া নগরবাসী বাইরে বের হননি। যারা বেরিয়েছেন তাদের সহ্য করতে হয়েছে সীমাহীন যন্ত্রণা। রাজপথে যান চলাচলও ছিল বেশ কম। অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল রাজপথে নামেনি বললেই চলে। কিছু চললেও তারা ভাড়া বাড়িয়ে দেয় দেড়-দুই গুণ। রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চালকরাও মওকা নিয়েছে। অফিসগামী ও বাসামুখী নগরবাসীর ভোগান্তি ছিল সীমাহীন। বৃষ্টির কারণে রাস্তাগুলো ময়লা-কাদা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। কাঁচাবাজার ও আশপাশ এলাকায় তৈরি হয় উৎকট অবস্থা। বৃষ্টির কারণে বেশ কিছু ক্রসিংয়ে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। ফলে ওইসব পয়েন্টে যানবাহনের জট লেগে যায়।

স্কুলগামী শিক্ষার্থী, এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুঃসহ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে জবজবে হয়ে স্কুলে ও পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে হয় অনেকের। স্কুল-পরীক্ষা শেষে ঘরে ফিরতেও একই অবস্থায় পড়েছে তারা।

গণপরিবহন কম থাকায় বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে ছাতা মাথায় অসংখ্য নগরবাসীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। হাতিরপুল, গ্রিন রোড, হাতিরঝিল, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। সচিবালয়ের সামনের রাস্তায়ও পানি জমে যায়। অনেক এলাকায় পানির সঙ্গে স্যুয়ারেজ লাইনের বর্জ্য যুক্ত হয়ে দুঃসহ অবস্থা তৈরি হয়। ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট কাদাপানিতে তলিয়ে নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়া এলাকার সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় যানজটের।

সিটি করপোরেশন জানায়, প্রতি ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতা বর্তমান ড্রেনেজ ব্যবস্থায় রয়েছে। এর চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হলেই জলজট তৈরি হয়। এবার একটানা বৃষ্টি হলেও মাত্রা ছিল কম। ধীরে ধীরে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় জলাবদ্ধতা তেমন তৈরি হয়নি। অনেক স্থানে বৃষ্টি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে কিছু ট্রাফিক সদস্যকে রাস্তার পাশে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে দেখা যায়। এ সুযোগে অনেক চালক খেয়াল-খুশিমতো গাড়ি চালাতে গিয়ে যানজট বাধিয়ে দেয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ জানায়, অনেক স্থানে রাস্তা ভাঙাচোরা ও কাটা। এ জন্য কিছু স্থানে যানজট তৈরি হয়। এ রকম অবস্থায় অনেক চালক বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো শুরু করে। তখন কর্তব্যরত ট্রাফিক সদস্যদের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।