গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কাউলীবেড়া ইউনিয়নের খাটরা খাল সংলগ্ন সড়ক ভেঙে প্রায় ৯ কিলোমিটারজুড়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে শিশু শিক্ষার্থীসহ দুই উপজেলার কয়েক হাজার মানুষকে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাউলীবেড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উত্তরে এক কিলোমিটার যাওয়ার পর সড়কটির প্রায় ৩০০ ফুট রাস্তা খালের মধ্যে ভেঙে পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে সড়কটির প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক ধরে সামনে আরও প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে খাটরা খালে মূল সড়কটির প্রায় আড়াইশ' ফুট রাস্তা ভেঙে পড়েছে। এ সড়ক ধরেই যাতায়াত করছেন শিশু শিক্ষার্থীসহ ভাঙ্গা ও সদরপুর— এই দুই উপজেলার মানুষ। ধসে পড়া সড়ক থেকে মাত্র দুইশ’ ফুট দূরেই  খাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রয়েছে গাছ-পালা, দোকানঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ পুরাতন কয়েকটি মন্দির। একদিকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, অন্যদিকে সড়কের দু’পাড়ে খাটরা খাল। খালটি আড়িয়াল খাঁ নদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে কুমার নদে মিশেছে।

জানা গেছে, ২০০৪ সালে কাউলীবেড়া ইউনিয়ন পরিষদের উত্তরে পার্শ্ববর্তী উপজেলা সদরপুর আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগের জন্য প্রায় ৯ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ করে ভাঙ্গা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। এর মধ্যে একবার ২০১৭ সালে সড়কটি সংস্কার করা হয়। সংস্কারের মাত্র কয়েক মাস পরেই ৯ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং খোয়া বালু উঠে বর্তমানে বেহাল দশা হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি ও পানিতে পুরো সড়কজুড়েই খানাখন্দে পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

কাউলীবেড়া থেকে ভাঙ্গা উপজেলা ও সদরপুর আটরশি থেকে ফরিদপুরে দুই উপজেলার প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ প্রতিদিন এ সড়কে যাতায়াত করেন। সড়কটির দুরবস্থার কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বয়স্করা।

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বfর মো. শহীদ মিয়া বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদের সঙ্গে খাটরা খালটির সংযোগ হয়ে ভাঙ্গা কুমার নদে মিশেছে। বর্ষায় পানি ও প্রচুর স্রোত থাকায় প্রতিবছরই পুরো সড়কটি ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

স্থানীয় মুদি দোকানদার সুনিল হালদার বলেন, প্রায় দু’বছর ধরে সড়কটির বেহাল দশা। প্রায়ই ওই জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের শিশু-সন্তানেরা ওই সড়ক দিয়েই বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে।

অটোচালক কার্তিক রায় জানান, সম্প্রতি যাত্রীসহ একটি অটোবাইক ওই জায়গায় রাস্তা পারের সময় খাদে পড়ে যায়। এতে শিশুসহ কয়েক যাত্রী গুরতর আহত হয়।

খাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মালা রানী সাহা জানান, ১৯৪২ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ে ৩০৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই ওই ভাঙ্গা সড়কে পড়ে আহত হয় শিশু শিক্ষার্থীরা। তারা প্রতিদিন খুবই ঝুঁকির মধ্যে সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে। সড়কটি ধসে যাওয়ায় বিদ্যালয়টি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। খুব দ্রুত স্কুলের চারপাশে বাঁধ ও পাকা বাউন্ডারি দেওয়া প্রয়োজন। 

ভাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মালেক মিয়া জানান, ৬ মাস আগে টেন্ডার হয়েছে। বর্ষায় বৃষ্টির কারণে কাজ করা সম্ভব হয়নি। কাউলীবেড়া বাজার থেকে পরানপুর ব্রিজ পর্যন্ত ১৮ ফিট চওড়া ৯ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং করা হবে।

ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজিম উদ্দিন জানান, সড়কটি মেরামতের জন্য টেন্ডার হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ খুব দ্রুতই রাস্তাটির সংস্কার করবে।