স্থায়ী ঠিকানা জটিলতার কারণে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ আটকে যাওয়া আসপিয়া ইসলাম কাজলকে (১৯) জমি ও ঘর দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। 

হিজলা উপজেলাতেই তাকে সরকারি আশ্রায়ন প্রকল্পের জমি ও ঘর দেয়া হবে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন হায়দার। 

তবে জমি ও ঘর পেলেও আসপিয়ার পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।   

জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হাসান শুক্রবার বিকালে সমকালকে বলেন, ‘কনষ্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি, কাউকে এখন নিয়োগ প্রদান বা বাদ দেয়া হয়নি, আসপিয়াসহ সকল নিয়োগ প্রত্যাশীদের নিয়োগের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন।’ 

বরিশাল জেলা প্রশাসন থেকে জমি ও ঘর বরাদ্ধ পেলে আসপিয়াকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ আছে কি-না প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন- ‘আমরা সব ব্যাপারে পজেটিভ। তবে যেকোন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত চাকুরী বিধির মধ্যে থেকেই নিতে হবে’। 

শুক্রবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন হায়দার সমকালকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসপিয়ার পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশ বাস্তবায়নে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজ শুরু করেছেন।’ 

হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশ পেয়ে তিনি আসপিয়ার পরিবারকে জমি ও ঘর দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। শুক্রবার সকালে আসপিয়াকে উপজেলা পরিষদে ডেকে এনে তার সার্বিক তথ্য নেওয়া হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে চলমান আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় আসপিয়ার পরিবারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে জমি ও ঘর দেয়া হবে। 

ইউএনও বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, পুলিশ কনষ্টবল পদে নিয়োগের সময়সীমা কতদিন তা আমার জানা নেই। তবে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে দ্রুত সময়ের জমি ও ঘর দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। 

এদিকে আসপিয়ার পুলিশে চাকরি নিশ্চিত হয়েছে এমন তথ্য ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও বিষয়টি নিছক গুজব বলে জানিয়েছেন আসপিয়া। 

তিনি বলেন, ‘আমার চাকরি হয়েছে এমন পোস্ট ফেসবুকে দেখেছি। তবে এ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র আমি পাইনি বা মৌখিকভাবে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।’ 

পিতৃহীন ২০২০ সালে হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে আসপিয়া উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে বরিশাল জেলায় পুলিশ কনেষ্টবলের শুন্য পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে আসফিয়াও আবেদন করেন। 

১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইন্সে শারীরিকযোগ্যতা পরীক্ষা, ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা এবং ২৪ নভেম্বর একইস্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন তিনি। 

পরে ২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইন্সে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সর্বশেষ ২৯ নভেম্বর ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন্সে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় আসপিয়ার। 

সংসারের অভাব-অনটন লাঘবের স্বপ্নে নিয়োগপত্র পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশি তদন্তে ঘটে বিপত্তি। 

আসপিয়ার নাম, ঠিকানা ও পরিচয় তদন্তের কাজ করতে গিয়ে হিজলা থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আব্বাস উদ্দিন জানতে পারেন আপসিয়ার পরিবার হিজলার মেজবাহউদ্দিন অপু চৌধুরীর বাড়ির ভাড়াটিয়া বাসিন্দা। হিজলায় তাদের জমিজমা নেই। তার দাদাবাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। 

বরিশাল জেলায় স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় নিয়োগ বিধি অনুযায়ী আসপিয়া নিয়োগ পাওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।