- সারাদেশ
- পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই, ২ বছর পর অপসারণ
পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই, ২ বছর পর অপসারণ

পৌনে দুই বছর পর এক্সরেতে ধরা পড়ে বিষয়টি -সমকাল
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক তরুণীর অস্ত্রপচারের পর পেটের মধ্যে কাঁচি রেখেই সেলাই করে দেওয়া হয়। এর পৌনে দুই বছর পর ওই হাসপাতালেই আবার অস্ত্রপচার করে তার পেট থেকে কাঁচিটি বের করা হয়েছে।
ওই তরুণীর নাম মনিরা খাতুন (১৯)। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ঝুটিগ্রামের বাসিন্দা খাইরুল মিয়ার মেয়ে।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৩ মার্চ ওই মেডিকেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ ইউনিট টুতে অস্ত্রোপচার করা হয় মনিরার। পেটে সিস্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় তার পেটের মধ্যে কাঁচিটি রেখেই সেলাই করা হয়।

মেয়েটির ভাই একটি বেসরকারি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি মো. কাইয়ুম জানান, অস্ত্রোপচারের কয়েক দিন পরেই মনিরার বিয়ে হয়। বিয়ের পরেও তার পেটে ব্যাথা ছিল। এরপর তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। পরে মনিরার পেটের বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেলে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্বামী। এরপরেও বিভিন্ন গ্রাম্য চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু তার পেট ব্যাথা কমেনি। তাকে এই সময়ে ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ানো হয়। দুইদিন আগে তার পেটে অসহনীয় ব্যথা উঠলে গত বুধবার মুকসুদপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। ওই ক্লিনিকে এক্সেরের মাধ্যমে চিকিৎসক দেখতে পান, মনিরার পেটের মধ্যে একটি কাঁচি রয়েছে। শুক্রবার মনিরাকে ফরিদপুর আনা হয়। এখানে এসে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে আপার এক্সরে করা হলে ওই একই রিপোর্ট আসে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মনিরার অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে অংশ নেন সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক রতন কুমার সাহা, সহযোগী অধ্যাপক মোল্লা সরফউদ্দিন ও রেজিস্ট্রার সালেহ মো. সৌরভ। তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে মনিরার পেট থেকে কাঁচিটি বের করা হয়।
সহযোগী অধ্যাপক মোল্লা সরফউদ্দিন ও রেজিস্ট্রার সালেহ মো. সৌরভ ২০২০ সালের ৩ মার্চ ওই অপারেশনটি করেছিলেন। তবে তারা এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
অধ্যাপক রতন কুমার সাহা বলেন, তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। মনিরার সংজ্ঞাও ফিরেছে। দীর্ঘদিন কাঁচিটি পেটের মধ্যে থাকায় পেটের নাড়ি পেঁচিয়ে যায় এবং একটি নাড়িতে পচন দেখা দেয়। রোগী নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে। ৭২ ঘণ্টা না গেলে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ঘটনাটি কিভাবে ঘটেছে তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন