- সারাদেশ
- গাইবান্ধায় ধ্বংস হতে বসেছে গেজেটেড অফিসার্স কোয়ার্টার
গাইবান্ধায় ধ্বংস হতে বসেছে গেজেটেড অফিসার্স কোয়ার্টার

গাইবান্ধা শহরের গেজেটেড অফিসার্স কোয়ার্টারে চলে মাদক সেবন, অসামাজিক কর্মকাণ্ড। ছবি-সমকাল
গাইবান্ধা শহরের বাংলাবাজার এলাকায় অবস্থিত গেজেটেড অফিসার্স কোয়ার্টারটি এখন মাদক সেবন এবং অসামাজিক কর্মকাণ্ডের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বিগত ২০ বছর ধরে সেখানে কেউ বসবাস করে না। ‘হাউস রেন্ট’ বাঁচাতে অফিসাররা এখন জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় অথবা বেসরকারি কোন বাসায় স্বল্প ভাড়ায় থাকেন।
অফিসার্স কোয়ার্টারের ভবনগুলো অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থেকে জরাজীর্ণ দশায় পরিণত হচ্ছে। এ সুযোগে একটি সমাজবিরোধী চক্র বিভিন্ন ভবনের দরজা-জানালা, গ্রীল, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের যন্ত্রপাতি, বেসিন ইত্যাদি চুরি করে নিয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে সেখান থেকে ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে একে একে বিভিন্ন সম্পদ লুট করে নিয়ে গেলেও কারও এ নিয়ে যেন মাথাব্যথা নেই।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল চত্বরে চারদিকে দেয়াল ঘেরা থাকলেও প্রধান ফটক অরক্ষিত থাকায় খেলার মাঠ এবং ফাঁকা জায়গায় গরু চরছে।
গণপূর্ত বিভাগ ১৯৮৬ সালে ৫ দশমিক ২৮ একর জমির উপর এ জেলার গেজেটেড অফিসারদের বসবাসের জন্য এ স্টাফ কোয়ার্টারটি নির্মাণ করে। এতে ৪টি ব্লকে তিনটি দ্বিতল ও একটি ত্রিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। এসব ভবনের নাম দেওয়া হয় সাবিতা, ললিতা, ববিতা ও উত্তরা। শুরুতে সবগুলো ব্লকেই বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা বসবাস করতেন। কোয়ার্টার ভবনগুলোর সামনে বিরাট খেলার মাঠ। ওইসব কর্মকর্তাদের সন্তানরা সেখানে খেলাধুলা করত। বসবাসকারীদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে থাকতো গোটা স্টাফ কোয়ার্টার।
কিন্তু পরবর্তীতে গেজেটেড অফিসার্স ডরমেটরি, সার্কিট হাউস, জেলা পরিষদের ডাকবাংলো এবং বিভিন্ন বিভাগের নিজস্ব রেস্ট হাউসে কর্মকর্তারা থাকতে শুরু করলে গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন এ অফিসার্স কোয়ার্টারটি ফাঁকা হতে শুরু করে। ২০০১ সালের দিকে এটি একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়।
হাউস রেন্ট বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই অফিসাররা এই পথ বেছে নেন বলে জানান গণপূর্ত দপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী।
এদিকে স্টাফ কোয়ার্টারের বিভিন্ন স্থানে ঝোপ জঙ্গল গজিয়ে উঠতে থাকে। এ সুযোগে ওই ফাঁকা ভবনগুলোতে বহিরাগতদের আনাগোনা শুরু হয়। সন্ধ্যা হলেই সেখানে মাদক সেবীদের আড্ডা এবং সাথে সাথে জমজমাট মাদক ব্যবসাও চলে। শুধু তাই নয়, সেখানে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কথাও শোনা যায়।
এদিকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে উপজেলা দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি, গাইবান্ধা সদর উপজেলাসহ দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান কয়েকটি কক্ষ নিয়ে সেখানে কার্যক্রম চালু হয়েছে। ওই ভবনের বাকি কক্ষসহ অপর ৩টি ভবনের সবগুলো কক্ষই পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি একজন নাইট গার্ডকে সেখানকার তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বহিরাগতদের অসামাজিক কার্যকলাপ তাতেও বন্ধ হয়নি। বরং তাদের আনাগোনা বেড়েই চলেছে।
এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবিল আয়াম বলেন, ‘ব্যবহার না করায় ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা আর কেউ কোয়ার্টারে থাকতে চান না। এগুলোর সংস্কার ও মেরামতের জন্য কয়েক বছর আগে ঢাকায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল কিন্তু তাতে অনুমতি পাওয়া যায়নি। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই প্রতিবছর পাঁচ লাখ টাকার প্রয়োজন। যেখানে আয় নেই সেখানে ব্যয় করার যুক্তি নেই।’
মন্তব্য করুন