- সারাদেশ
- ৯৪ বছরের পুরনো স্কুলে এখন শিক্ষক মাত্র ২ জন
৯৪ বছরের পুরনো স্কুলে এখন শিক্ষক মাত্র ২ জন

ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীরা।
দু’টি ভবন নিয়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯২৭ সালে ৫০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। শিক্ষকের পদ আছে পাঁচ জনের। আছেন মাত্র দু’জন শিক্ষক। একজন ছুটিতে গেলে, স্কুলে থাকেন মাত্র একজন। ওইদিন একজন শিক্ষককেই চালাতে হয় পুরো স্কুলের কার্যক্রম। মঙ্গলবার দুপুরে এমন চিত্রই দেখা যায় মুক্তাগাছার নিমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, একজন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন পুরো স্কুল জুড়ে। আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রয়েছেন ছুটিতে। তাই ওই সহকারী শিক্ষকই চালাচ্ছেন স্কুলটি। অথচ স্কুলটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। একজন শিক্ষক দিয়ে কি করে সম্ভব স্কুলটি পরিচালনা করা, এমন প্রশ্ন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির।
মুক্তাগাছা শহর থেকে ৮ কিলোমিটরা দূরে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে অবস্থিত বিদ্যালয়টি। ১৯২৭ সালে ৫০ শতাংশ জমির ওপর স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন এলাকার সমাজসেবক আইনুদ্দিন তালুকদার। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনামের সঙ্গে চলে আসছে স্কুলটি। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও একদম কম নয়। এ বছর হাজিরা খাতায় শিক্ষার্থী রয়েছে ২৭৮ জন। ওই হিসেবে শিক্ষকের পদ রয়েছে পাঁচ জনের। অথচ সেখানে রয়েছে মাত্র দু’জন শিক্ষক। চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নাজমা খাতুন আর সহকারী শিক্ষক শাহনাজ আক্তার- এ দুজন শিক্ষকই চালিয়ে নিচ্ছেন স্কুলটি।
এছাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই দুই বছর ধরে চলছে বিদ্যালয়টি। অথচ ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে শহরের একদম কাছে অবস্থিত বিদ্যালয়টি। মঙ্গলবার স্কুলে গিয়ে দেখা যায় সহকারী শিক্ষক শাহনাজ আক্তার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন। আর অফিস কক্ষে আছেন একজন পিয়ন।
স্কুলে নেই খেলার মাঠ। স্কুলের সামনের অংশে রয়েছে বিশাল পুকুর। এক বছর আগে পুকুরের কিছু অংশ ভরাট করা হলেও পুকুরের বাকি অংশ ভরাট করা হয়নি। যে কারণে এখনো তৈরি হয়নি খেলার মাঠ। মাঠ না থাকায় দৈনিক সমাবেশ হচ্ছে না স্কুলের। পুকুরের ভয়ে শিক্ষার্থীদের সারক্ষণ বন্দি থাকতে হয়ে স্কুল কক্ষেই।
সহকারী শিক্ষক শাহনাজ আক্তার জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছুটিতে থাকায় তার একাই চালাতে হচ্ছে স্কুলটি। তারা মাত্র দু’জন শিক্ষক রয়েছেন এ স্কুলটিতে। বারবার শিক্ষকের চাহিদা দেওয়া হলেও তারা আর কোনো সহকারী শিক্ষক পাচ্ছেন না। এতে তাদের অনেক কষ্ট করেই চালাতে হচ্ছে স্কুলটি।
ক্লাসে কথা হয় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী লাভনী আক্তার ও শাওন আহমেদের সঙ্গে। তারা জানায়, খেলার মাঠ না থাকায় তাদের ক্লাসেই বন্দি থাকতে হয়। এছাড়া শ্রেণি কক্ষের সঙ্গেই রয়েছে পুকুর। পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে তাদেরকে ক্লাস থেকে বের হতে দেওয়া হয় না। এ জন্য তারা একটি খেলার মাঠের দাবি জানায়।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোতালেব হোসেন বলেন, স্কুলের খেলার মাঠ নেই, শিক্ষক সংকট। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি দীর্ঘদিনেও। দু’জন শিক্ষক দিয়ে কি করে সম্ভব একটি স্কুল পরিচালনা করা। এমনকি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এ ধরনের খবর রাখার পরও তিনি কখনো পরিদর্শনে আসেননি এ স্কুলে। অথচ স্কুলটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত।
শিক্ষক সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান সমকালকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক বদলি বন্ধ রয়েছে। এ কারণেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বদলি চালু হলেই স্কুলে শিক্ষক দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন