ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কৃষকের অজ্ঞাতে গচ্ছা সাড়ে চার কোটি টাকা

কৃষকের অজ্ঞাতে গচ্ছা সাড়ে চার  কোটি টাকা

প্রতীকী ছবি

তানোর (রাজশাহী) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০১:৫০

আমন ধান কাটার পর বিঘাপ্রতি ৫০০ টাকা খরচে ক্ষেতের নাড়া (ধান গাছের নিচের অংশ) সরিয়েছেন তানোরের ধানতৈড় এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম। এভাবে পাঁচ বিঘা জমি প্রস্তুত করে আলু চাষ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, ছয় বছর ধরে আলু চাষের সময় নাড়া সরিয়ে দেন। পুড়িয়েও ফেলেন। কারণ এগুলো রাখলে জমি প্রস্তুত ও সারি তৈরিতে সমস্যা হয়। কিছু বাড়িতে নিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন। শহিদুলের মতো এলাকার অনেকে জানিয়েছেন একই তথ্য।

অথচ এ নাড়া ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তানোরে চলতি মৌসুমে নাড়া দিয়ে অন্তত ৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার সাশ্রয় করা সম্ভব ছিল। অথচ কৃষকদের অজ্ঞাতে ক্ষতি হচ্ছে কোটি টাকার। তাদের সচেতন করা গেলে রাসায়নিক সারের নির্ভরতাও কমবে।

কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে তানোরে ২২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছিল। এখন রবি মৌসুমে ধানক্ষেত রবিশস্যের আওতায় আসছে। এ মৌসুমে সারের বড় অংশ ব্যবহার হয় আলুতে। উপজেলায় ১৩ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, অন্য রবিশস্য চাষের জন্য ক্ষেতে নাড়া রেখেছেন কৃষক। তবে আলুচাষের জমির নাড়া সরিয়ে ফেলেছেন।

আলু আবাদের জন্য তড়িঘড়ি নাড়া কেটে ফেলেন বলে জানান সমাসপুর গ্রামের কৃষক সুকুমার রবিদাস। তবে এগুলো রাখার উপকারিতা জানা নেই তাঁর। সরনজাই ইউনিয়নের তামিম আহম্মেদ বলেন, নাড়া পচালে জৈব সার হয়, এটা জানেন। তবে কে আগে আলু লাগাবে, তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। নাড়া পচানোর সুযোগ হয় না। 

ধানক্ষেতের নাড়া পোড়ানোর সময় মাটির ক্ষুদ্র অণুজীব মারা যায় বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মদ। এ ক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ, চাষ দিয়ে এগুলো মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া ভালো। এতে মাটিতে জৈব পদার্থ যুক্ত হবে। পোড়ালেও মিউরেট অব পটাশ যুক্ত হয়। এটি সম্ভব হলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমবে।

ধানের নাড়ার মাধ্যমে এভাবে সার সাশ্রয়ের বিষয়ে ২০০৩ সাল থেকে গবেষণা করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ। এ বিভাগের প্রধান ও চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার (সিএসও) ড. আমিনুল ইসলাম বলেন, এক মণ ধান উৎপাদনে দেড় কেজি ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি বা ডিএপি, দুই কেজি এমওপি, ৬০০ গ্রাম জিপসাম ও ১৪ গ্রাম দস্তা লাগে। আমন ধান কাটার সময় প্রতি বিঘায় ২০ সেন্টিমিটার উচ্চতার নাড়া রেখে মাটিতে মিশিয়ে দিলে তিন কেজি ইউরিয়া, ১ কেজি ৩৪০ গ্রাম টিএসপি, ছয় থেকে আট কেজি এমওপি এবং ১ কেজি ৬০০ গ্রাম জিপসামের উপকার পাওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন

×