অবরোধ-হরতালেও বন্ধ হয়নি শ্রমিকের হাট

গুরুদাসপুরের বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের পাশে নয়াবাজার হাটে শ্রমিকের ভিড় সমকাল
নাজমুল হাসান, গুরুদাসপুর (নাটোর)
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৩:১৯
ভোরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ থেকে এসেছেন জামাল হোসেন। কাঁধে ধান বহনের বাক, হাতে কাস্তে। হাটে শ্রম বিক্রির অপেক্ষায় আছেন। দুই সপ্তাহ ধরে হাটে এসে শ্রম বিক্রি করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। তাঁর মতো সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, হরিণচরা, খালখোলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন হাজারো শ্রমিক। ভোরের কুয়াশা, হরতাল কিংবা অবরোধেও বন্ধ থাকে না এ হাটের কার্যক্রম।
গুরুদাসপুরের বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের পাশেই নয়াবাজার হাট। ভোরের আলো না ফুটতেই আনাগোনা বাড়ে শ্রমিকের। গৃহস্থরা শ্রমিক নিয়ে যান জমিতে। একযুগ ধরে এভাবে চলছে হাটটি। জীবিকার তাগিদে আশপাশের কয়েকটি জেলা থেকে শ্রমিকরা আসেন এখানে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হরতাল কিংবা অবরোধেও বন্ধ হয়নি হাটের কার্যক্রম। কাকডাকা ভোরে জীবিকার তাগিদে ট্রাকে করে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও অনেকে আসেন। অন্য সময় বাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে এলেও হরতাল-অবরোধের সময় এগুলো বন্ধ থাকে। এ সময়ে ট্রাকে করে আসেন তারা। তবে এভাবে আসতে ঝুঁকির সঙ্গে বাড়তি ভাড়াও গুনতে হয় তাদের।
আগের বছরও নয়াবাজার হাটে শ্রম বিক্রি করতে এসেছিলেন তাড়াশের জামাল হোসেন। তবে এবারের মতো ভয় ছিল না তাঁর। গত বছর ঢাকা থেকে ফেরা মিনি ট্রাক, মাছের গাড়ি, পিকআপ ছাড়াও স্থানীয় ভ্যান, টেম্পো ও ভটভটিতে অল্প খরচে এসেছেন। এবার আগের তুলনায় দ্বিগুণ টাকা দিয়ে আসতে হচ্ছে। তিনি বলেন, যাতায়াতের সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। কখন গাড়িতে আগুন দেয়, ককটেল বিস্ফোরণ হয়। জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আসতে হচ্ছে।
শ্রমিকরা জানান, মূলত প্রতি বছরের এ সময়ে হাট জমজমাট হয়। দিনে পাঁচ থেকে ছয় হাজার শ্রমিকের কাজের ব্যবস্থা হচ্ছে। এলাকায় বিনাহালে রসুন রোপণ, খড় বিছানো, ধান কাটাসহ জমি তৈরির কাজ করানো হয় তাদের দিয়ে। স্থানীয় শ্রমিকরা মজুরি পান ৬০০ টাকা। তবে বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের দেওয়া হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। যদিও দুই বেলা খাবার দেন গৃহস্থরা।
এ হাটে শ্রম বিক্রি করলে খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হয় না বলে জানান রায়গঞ্জ থেকে আসা রবিউল করিম। তার পরও মজুরি বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি তাঁর। এ শ্রমিকের ভাষ্য, যাতায়াত ভাড়া আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতিদিন হাট পর্যন্ত আসতে গুনতে হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অথচ গত বছর ভাড়া ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এ ছাড়া হরতাল-অবরোধের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে আসতে হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ চলনবিলের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও পাবনার চাটমোহরে একযোগে রবি শস্যের আবাদ শুরু হয়েছে। চলনবিলের পানি নামার সঙ্গে সঙ্গেই জেগে ওঠে আবাদি জমি। ধান কাটার পর রসুন, ভুট্টা, সরিষাসহ রবিশস্য আবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কৃষক। এসব কাজে স্থানীয়দের তুলনায় কম মজুরিতে হাটে পাওয়া যায় অন্য এলাকার শ্রমিক।
বিনাহালে রসুন চাষ ও ধানের মৌসুমে এলাকায় শ্রমিক সংকট থাকে বলে জানান গৃহস্থ আব্দুল খালেক। তিনি বলছিলেন, স্থানীয় শ্রমিকদের মজুরি বেশি। অন্য এলাকা থেকে আসা শ্রমিকদের শ্রম স্বাভাবিক দামে কিনে নেওয়া যায়। আরেক গৃহস্থ রমজান আলী প্রতি বছর পাঁচ বিঘা জমিতে বিনাহালে রসুন চাষ করেন। প্রয়োজনীয় শ্রমিক হাট থেকে নিয়ে যান। তিনি বলেন, আলাদাভাবে শ্রমিক খুঁজতে হয় না। চাষাবাদের জন্য নিশ্চিন্তে থাকেন।
তবে শুধু নয়াবাজার নয়, বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক ঘেঁষে হাঁসমারী ও বড়াইগ্রামের মানিকপুর পয়েন্টেও হাট বসছে বলে জানান ধারাবারিষা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন। তিনি জানান, একযুগ ধরে এ হাট বসছে। কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশীদ বলেন, সময় মতো দিনমজুর পাওয়ায় এলাকার মানুষ ভালোভাবে চাষাবাদ করতে পারছেন।