বেপরোয়া ইজারাদার কর্তৃপক্ষ নির্ভার
ছাতকের পাবলিক খেয়াঘাট থেকে ছোট নৌকায় করে যাত্রী পারাপার সমকাল
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২২:২৯
ছাতকের সুরমা নদীতে পাবলিক খেয়াঘাটে নিয়োগকৃত সাব-ইজারাদারের দৌরাত্ম্য ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইজারাদারের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেন কোনো দায়ই নেই। প্রকাশ্যে চলমান অব্যবস্থার বিষয়ে তারা বলছেন– খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক দিন ধরে ঘাটে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত খেয়া ভাড়া আদায়ের জন্য যাত্রীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। প্রতিদিনই কৌশলে সুরমা নদী পারাপারে ঘাটে যাত্রীদের কাছ থেকে খেয়া ভাড়া ১০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। যে কারণে নিয়মিত নদী পারাপারে যাত্রীদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের আওতাধীন ছাতকের পশ্চিম বাজারের পাবলিক খেয়াঘাট অবস্থিত। এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে কয়েক হাজার মানুষ নিয়মিত খেয়া পার হন। তবে ভাড়া নিয়ে তাদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত খেয়া ভাড়া ৪ টাকা হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণেও বেশি। বাড়তি ভাড়া নিয়ে কথা বলতে গেলে মাঝি এবং ইজারাদারের লোকজনের দুর্ব্যবহারের মুখে পড়তে হচ্ছে, হতে হচ্ছে লাঞ্ছিত।
এছাড়া ঘাটের নৌকাগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাড়তি যাত্রী বহন করা হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করা নিয়ে গত সপ্তাহে নোয়ারাই ঘাটে খেয়াতেই যাত্রী ও সাব-ইজারাদারের পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায়ও যাত্রী হয়রানি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সমস্যা সমাধানে কোনো পক্ষের তৎপরতা নজরে আসেনি।
খেয়া পারাপারের মূল্য তালিকাসংবলিত ঘাটে সাইনবোর্ড ঝোলানোর শর্তসহ ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণ ও খেয়াঘাট অন্য কারও কাছে হস্তান্তর না করার শর্তে ইজারা দেওয়া হলেও সরকারি এসব শর্ত ভঙ্গ করে সাবলিজ দেওয়া হয়েছে। শুরু থেকেই সাবলিজের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে ঘাটের কার্যক্রম। যাত্রী হয়রানি এবং ভাড়া আদায় ও ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাচারিতাসহ ইচ্ছে মতো সব কিছু পরিচালনা করছে ঘাটের সাবলিজ গ্রহীতারা। খেয়াঘাটে যাত্রী ভাড়া নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করা হয়।
সুরমা নদী পারাপারে নৌকার নিয়মিত যাত্রী নোয়ারাই ইসলামপুর গ্রামের আমির হোসেন, জয়নগর গ্রামের আব্দুর রহিম ও জোড়াপানি গ্রামের আব্বাস উদ্দিন জানান, প্রতিদিন সুরমা নদী পাড়ি দিলেও ৪ টাকা হারের বড় নৌকা সপ্তাহে একদিনও পাওয়া যায় না। ছোট নৌকায় করে পারাপার করা হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। তার মধ্যে জনপ্রতি খেয়া ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা করে। দিনের বেশির ভাগ সময় বড় নৌকা বন্ধ রেখে ছোট নৌকায় পারাপার চলে। স্থানীয় মাঝিরা ইজারাদারের প্রশ্রয়ে ভাড়া আদায় করছে দ্বিগুণের বেশি।
স্থানীয়রা অব্যবস্থা ও হয়রানি নিয়ে খেয়াঘাটে প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পাননি। তবে খেয়াঘাটে যাত্রী হয়রানির কথা অস্বীকার করে সাব-ইজারাদারের লোকজন বলছেন, এখানে এমন কোনো ঘটনাই ঘটছে না।
ছাতক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসলাম উদ্দিন জানান, ছাতক বাজার পাবলিক খেয়াঘাটে ভাড়া আদায়সংবলিত চার্ট না টানানো, কৌশলে যাত্রী হয়রানি, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জেলা পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবলিক খেয়াঘাটের সাব-ইজারাদার সায়েদ মিয়া জানান, যাত্রী হয়রানির অভিযোগ সঠিক নয়। মাঝিরা যাত্রী হয়রানি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।