ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

দায়িত্ব শেষেও মেলেনি ভাতা

দায়িত্ব শেষেও মেলেনি ভাতা

,

ধর্মপাশা ও তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ০০:০১

সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনের দুই উপজেলায় নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী দেড় হাজারের বেশি কর্মকর্তা যাতায়াত ভাতা পাননি। অথচ তাদের কাছ থেকে যাতায়াত ভাতার মাস্টাররোলে সই নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার ভুক্তভোগী একাধিক কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। উপজেলা দুটি হলো– তাহিরপুর ও মধ্যনগর।
তাহিরপুর উপজেলায় ৫৩টি ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৬১ জন প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। কাজের সূত্রে দুর্গম ও হাওরাঞ্চলে যাতায়াত ভাড়া বাবদ জনপ্রতি দুই হাজার টাকা সম্মানী দেওয়ার কথা। ধর্মপাশা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় দায়িত্ব পালনকারীরা এ টাকা পেলেও বঞ্চিত হয়েছেন তাহিরপুরে কর্মরতরা। বিষয়টি নিয়ে একাধিক কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মুকসেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য কাঞ্চু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘তাহিরপুরে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক-কর্মচারী কেউ কি যাতায়াত ভাতা পেয়েছেন?’ উত্তরে তাহিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রণদা গাঙ্গুলি লিখেছেন, ‘না কেউ পায়নি। তবে বিশ্বম্ভরপুর পেয়েছে।’
লাউড়েরগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদাৎ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ফাঁকা কাগজে আমাদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাতায়াত ভাড়া দেওয়া হয়নি। এখন আর টাকা চাই না। তবে এ ধরনের জালিয়াতি দুঃখজনক।’ একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বারুঙ্কা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চক্রবর্তী।
অভিযোগের বিষয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও বাদাঘাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মৃদুল কান্তি কর জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ফাঁকা ভাউচারে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অজয় কুমার দে বলেন, যাতায়াতের জন্য জনপ্রতি দুই হাজার টাকা দেওয়ার কথা চিঠিতে উল্লেখ ছিল। কিন্তু তাহিরপুরে কাউকেই এ টাকা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি দুঃখজনক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভিন বলেন, বিধি অনুযায়ী নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়েছে। তবে বরাদ্দ না থাকায় যাতায়াত ভাড়া দেওয়া যায়নি। ফাঁকা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সেটি ছিল অপ্রয়োজনীয় যানবাহনের মাস্টার রোল। ভুলবশত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সরবরাহ করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এমন ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।
মধ্যনগর উপজেলার ২৬টি ভোটকেন্দ্রে রোববার ২৬ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ১৬৯ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৩১৭ জন পোলিং কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট ৫১২ জন দায়িত্ব পালন করেন। এ জন্য প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ১২ হাজার টাকা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ৯ হাজার ও পোলিং কর্মকর্তা ৬ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। যাতায়াত ভাতা বাবদ জনপ্রতি আরও ২ হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা। সব মিলিয়ে যা ১০ লাখ ২৪ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগ, অন্যান্য ভাতার টাকা দেওয়া হলেও ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আগে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশদর্শী চাকমা যাতায়াত ভাতার টাকা বিতরণের মাস্টাররোলে সই সংগ্রহ করেন। এতে অনেকেই আপত্তি জানান। তবে চাপের মুখে সই করতে বাধ্য হন বেশির ভাগ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। বাঁকাতলা ও মাটিয়ারবন্দ কেন্দ্রের কেউ অবশ্য সই করেননি।
ভোট গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেন, পাশের ধর্মপাশা উপজেলার ৪০টি ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা দৈনিক ভাতার পাশাপাশি ২ হাজার টাকা করে যাতায়াত ভাতা পেয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে মধ্যনগরের ২৬টি কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তারা আরও জানান, যেসব কেন্দ্রের কর্মকর্তারা সই করেননি, তাদের ইউএনও অতীশদর্শী চাকমার কার্যালয়ে নিয়ে যেতে সোমবার তিনি সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
আলমপুর দোয়াদুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পোলিং কর্মকর্তা ছিলেন আব্দুল হেলিম। তাঁর ভাষ্য, ‘প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আমাদের সই নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যাতায়াত ভাতার টাকা না থাকায় এখন দেওয়া যাচ্ছে না, পরে দেওয়া হবে। কিন্তু টাকা এখনও পাইনি।’
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আব্দুস সালামের ভাষ্য, ‘ইউএনও অফিসের একজন পিয়ন কেন্দ্রে গিয়ে ফোনে ইউএনওকে ধরিয়ে দেন।
তিনি (ইউএনও) আমাকে সবার সই নেওয়ার নির্দেশ দেন। সই নিলেও কেউ যাতায়াত ভাতার টাকা পাইনি।’
ঘাসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেলে ইউএনও আমাদের (প্রিসাইডিং) নিয়ে সভা ডেকেছেন। সেখানে এ নিয়ে কথা বলব। দেখি উনি কী সিদ্ধান্ত দেন।’
মধ্যনগরের ইউএনও অতীশদর্শী চাকমা সোমবার বলেন, ‘কে কী (অন্যান্য উপজেলা) করেছেন, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমার যেটা দায়িত্ব সেটা করেছি। আমার স্টাফ ভুল করে ভাউচারে সই নিয়েছে।’ তাঁর ভাষ্য, ‘যেভাবে বরাদ্দ এসেছে সেভাবেই দেওয়া হবে। আমার দিক থেকে আমি ক্লিয়ার। এ ব্যাপারে আইন-কানুন আছে। এ-সংক্রান্ত চিঠিগুলো আছে। যিনি আসবেন, তাঁকে বুঝিয়ে দেব।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এডিসি (রাজস্ব) বিজন কুমার সিংহ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন

×