ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধে ধরাশায়ী ইনু

আওয়ামী লীগের সঙ্গে  বিরোধে ধরাশায়ী ইনু

হাসানুল হক ইনু

সাজ্জাদ রানা, কুষ্টিয়া

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ০০:২৩

১৫ বছর ধরে কুষ্টিয়া-২ আসনে সংসদ সদস্য জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তবে এলাকায় নিজ দলকে সংগঠিত করতে পারেননি। এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত মজবুত করার চেয়ে হামলা-মামলায় দুই দলের ঐক্যে ফাটল ধরে। এর প্রভাব পড়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। প্রচার-প্রচারণায় পিছিয়ে পড়া ইনু শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন ২৩ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে।
ভোটের হিসাবে দেখা গেছে, নিজ উপজেলা ভেড়ামারায় হাসানুল হক ইনু জয়ী হতে পারেননি। এখানে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৭৩১ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল পেয়েছেন ৪১ হাজার ২৮২ ভোট। এখানে ইনুর ভোট কম পাওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ জানা গেছে। গত দুই বছরে জাসদ নেতাকর্মীর হাতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দুই নেতা হত্যার শিকার হয়েছেন। মামলা-হামলা দিয়ে বাড়িঘর লুটপাট করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় আধিপত্য নিয়ে দুই দলের দূরত্ব বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে। দুই দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘ইনুসহ জাসদ নেতারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে বাঁকা চোখে দেখেছেন। তারা প্রতিপক্ষ ভেবে অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যা করেছেন। নির্বাচনে এর ফল ইনু পেয়েছেন। ২০ পয়সার গরম দেখানো ইনু ৮০ পয়সার সমর্থন না পেয়ে এবার হেরে গেছেন।’

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিরোধ মিটিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্বাচন করলেও এবার এ উপজেলার সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ইনুবিরোধী অবস্থান নিলে দৃশ্যপট বদলে যায়। কামারুলের পক্ষে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ভেড়ামারায় প্রায় চার হাজার ভোট কম পেয়েছেন ইনু। মিরপুরে ব্যবধান আরও বেশি।
কামারুল আরেফিন মিরপুরে জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করেন। পরপর দুই দফায় উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন একবার। ইনু ও জাসদবিরোধী হিসেবে দলে পরিচিত কামারুল। রাজনীতির মাঠে জনপ্রিয় কামারুল প্রার্থী হওয়ায় মিরপুরের জাসদ নেতাকর্মীরা অনেকটা চুপসে যান। কামারুলের ট্রাকে উঠে পড়েন অনেক নেতাকর্মী। এমনকি ইনু মন্ত্রী ও এমপি থাকাকালীন তাঁর সমর্থন নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, এমন বেশ কয়েকজনও কামারুলের পক্ষে ভিড়ে যান। এ ছাড়া কামারুল মিরপুরের হওয়ায় স্থানীয় বিএনপির অনেকের সমর্থন পেয়েছেন। এসব কারণে ভোটের মাঠে পিছিয়ে পড়েন ইনু। শেষদিকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের হাতেগোনা কয়েকজন নেতা ইনুকে সমর্থন দেওয়ায় ব্যবধান কমা ছাড়া জয়ী হওয়ার মতো ভোট তাঁর পক্ষে পড়েনি। মিরপুরে কামারুল আরেফিন পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৫১৭ ভোট। ইনু পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৭৩৪ ভোট। দুই উপজেলা মিলিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন কামারুল। ইনু পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট।

কামারুল আরেফিন বলেন, ‘ভেড়ামারা-মিরপুরের মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। সন্ত্রাস-মাদক দূর করে শান্তির এলাকা গড়ে তোলা হবে। ইনুকে মানুষ লাল কার্ড দেখিয়েছে।’
জেলা জাসদ সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, ‘নির্বাচন মোটামুটি ভালো হয়েছে, এরপরও কিছু কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ইনু নৌকা প্রতীক পেলেও আওয়ামী লীগের বড় অংশ তাঁর পক্ষে নির্বাচনের মাঠে ছিল না। তাই ফল এমন হয়েছে। আওয়ামী লীগ বড় দল, তাদের ভোট কামারুল পেয়েছেন।’
এদিকে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, জনগণের রায় মেনে নিয়েছেন। দলগতভাবে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন। তবে পরাজয়ের জন্য প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন

×