খুলনার ছয় আসন
জাপা ও ৯ নামসর্বস্ব দল পেল ১% ভোট

.
হাসান হিমালয়, খুলনা
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ০০:৪৮ | আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ০৫:২৩
নিরুত্তাপ খুলনার নির্বাচনে আলোচনার খোরাক জুগিয়েছিলেন নামসর্বস্ব ৯টি রাজনৈতিক দলের ১৭ প্রার্থী। ভোটের মাঠে তাদের উপস্থিতি ছিল কম। ব্যালট পেপার ছাড়া আগে তাদের বিষয়ে জানতে পারেননি অনেকে। নাগরিক সমাজের নেতাদের অভিযোগ ছিল, অংশগ্রহণ বাড়াতে নামসর্বস্ব এসব দলকে নির্বাচনে আনা হয়েছে। একই অভিযোগ ছিল জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের নিয়েও। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে সেই অভিযোগেরই প্রতিফলন ঘটেছে। আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়া অন্যসব প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ১ শতাংশ ভোট, হারিয়েছেন জামানত।
ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খুলনার ছয়টি আসনে ১১টি দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে প্রার্থী ছিলেন ৩৯ জন। তাদের মধ্যে সব আসনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার মাঝিরাই বিজয়ী হয়েছেন। তারা পেয়েছেন ৬ লাখ ৩৩ হাজার ১৩৭ ভোট, যা মোট ভোটের ৬৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর নির্বাচনে নামসর্বস্ব ৯টি দলের ১৭ জন মিলে পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯৮টি, যা মোট ভোটের ১ দশমিক ৭ শতাংশ। জাতীয় পার্টির ছয় প্রার্থী মিলে পেয়েছেন ১৪ হাজার ৫৭৩ ভোট। এটাও শতাংশের হিসেবে ১ দশমিক ৬।
চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেছে, নির্বাচনে খুলনা-১, ২ ও ৩ নম্বর আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি। এর মধ্যে খুলনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডলের ১ লাখ ৪২ হাজার ৫১৮ ভোটের বিপরীতে নিকটতম স্বতন্ত্র প্রশান্ত কুমার রায় ৫ হাজার ২৬২ ভোট পেয়েছেন। খুলনা-২ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের ৯৯ হাজার ৮৬৮ ভোটের বিপরীতে নিকটতম জাতীয় পার্টির গাউসুল আজম পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৪১টি। খুলনা-৩ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের এস এম কামাল হোসেনের ৯০ হাজার ৯৯৯ ভোটের বিপরীতে নিকটতম জাতীয় পার্টির আবদুল্লাহ আল মামুন ৪ হাজার ৮৭৩টি পেয়েছেন। এই তিন আসনে আওয়ামী লীগ বাদে অন্যসব প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
খুলনা-৪, ৫ ও ৬ নম্বর আসনে নৌকা প্রতীকের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আওয়ামী লীগের আরও তিন নেতা। ক্ষমতাসীন দলের এই ছয় নেতার বাইরে অন্য সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, আমরা শুরু থেকে বলে আসছি, এটা সাজানো-পাতানো কয়েকটি দল ও প্রার্থী নিয়ে লোক দেখানো নির্বাচন। ফলাফলেও সেটি প্রমাণ হয়েছে।
৯ দলের ১৭ প্রার্থী কে কত ভোট পেলেন
খুলনা-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ প্রামাণিক ২ হাজার ১৪৮ ভোট; খুলনা-২ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার ৫২৮, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বাবু কুমার রায় ৩০৭, বিএনএমের আবদুল্লাহ আল আমিন ৮৯৬, গণতন্ত্রী পার্টির মতিয়ার রহমান ৮৪৫; খুলনা-৩ আসনের জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন ১ হাজার ৯৬৩; খুলনা-৪ আসনে বিএনএমের আজমল হোসেন ৩৪০, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা ১০১, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান ৩২০, ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দিন খান ২ হাজার ৪২৯, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান ৩৪৪; খুলনা-৫ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের এস এম এ জলিল ৬৮০, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ সেলিম আকবার ১ হাজার ৯৩; খুলনা-৬ আসনে বিএনএমের নেওয়াজ মোরশেদ ২ হাজার ১২০, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মির্জা গোলাম আজম ৫৫৬, এনপিপির আবু সুফিয়ান ৮৭৬ ও তৃণমূল বিএনপির নাদির উদ্দিন খান ২৬৩ ভোট পেয়েছেন। তারা সবাই জামানত হারিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির ছয় প্রার্থীর ভোট
খুলনা-১ আসনে কাজী হাসানুর রশিদ ৩ হাজার ৩৯৬ ভোট, খুলনা-২ আসনে গাউসুল আজম ৩ হাজার ৮৪১, খুলনা-৩ আসনের আবদুল্লাহ আল মামুন ৪ হাজার ৮৭৩, খুলনা-৪ আসনে ফরহাদ আহমেদ ৬৭৮, খুলনা-৫ আসনে শাহীদ আলম ১ হাজার ৬ এবং খুলনা-৬ আসনে শফিকুল ইসলাম মধু ৭৭৯ ভোট পেয়েছেন। তারাও সবাই জামানত হারিয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যত ভোট পেলেন
নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে খুলনা-৪ আসনে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা ৬০ হাজার ৮৯৩ ভোট, খুলনা-৫ আসনে ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন ৯৩ হাজার ৭৭ ভোট এবং খুলনা-৬ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জি এম মাহবুবুল আলম ৫১ হাজার ৪৭৪ ভোট পেয়েছেন। খুলনার ছয়টি আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের ছয় প্রার্থীর সঙ্গে তাদের তিনজনের জামানত রক্ষা পেয়েছে। তবে অন্য সাত স্বতন্ত্র প্রার্থীর সবাই জামানত হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে খুলনা-১ আসনে প্রশান্ত কুমার রায় ৫ হাজার ২৬২ ভোট, খুলনা-২ আসনে সাঈদুর রহমান ১ হাজার ৭২৭, খুলনা-৩ আসনে ফাতেমা জামান সাথী ৩ হাজার ২৩০, খুলনা-৪ আসনে রওশান জামির ২১৬, এহসানুল হক ৩১০, জুয়েল রানা ৫২৮ এবং রেজভী আলম ১ হাজার ৮৮৫ ভোট পেয়েছেন।